১ / রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি যে খাদ্যটি পছন্দ করতেন সেটি হচ্ছে খেজুর। খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি রয়েছে এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করার জন্য খেজুর খুব কার্যকরী খাদ্য। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , ক্যালসিয়াম এবং আয়রন থাকে। বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে একজন সুস্থ মানুষের যে পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন হয়ে থাকে তার 11 শতাংশ পূরণ করে এই খেজুর। খেজুর রক্ত উৎপাদনে খুবই ভালো ভূমিকা পালন করে আর এজন্য যাদের রক্তস্বল্পতা রয়েছে তারা খেজুর খেতে পারেন। এছাড়াও যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের রক্তচাপ কমাতে খেজুর অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিটি খেজুরে 20 থেকে 25 মিলি গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ( খেজুরের উপকারিতা ইসলাম )
2 / বিশ্ব নবী (সাঃ) এর মোস্ট ফেভারেট আরেকটি খাবার ছিল আর সেটি হল দুধ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা গৃহপালিত পশুর গোশত কম খাও কিন্তু দুধ বেশি খাও। খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন যুক্ত এবং সুস্বাদু খাবার হচ্ছে দুধ। দুধ খাওয়ার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও দুধ পান করার সবচেয়ে বড় উপকার হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়াও মেডিকেল সাইন্সে প্রমাণিত হয়েছে দুধ সর্বোৎকৃষ্ট খাবার যেখানে খাদ্যের প্রতিটি উপাদান বিদ্যমান। ( প্রতিদিন গরুর দুধ খেলে কি হয় )
3 / মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু এবং কালোজিরা খেতে খুবই পছন্দ করতেন। আর এই বিষয়ে তিনি বলেছেন মধু এবং কালো জিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔষধ। অর্থাৎ আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে কোন রোগ প্রতিরোধের জন্য মধু এবং কালোজিরা অনেক কার্যকরী খাদ্য। খাঁটি মধু আমাদের শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি উৎপাদন করতে পারে এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে পারে। যারা রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত তারা মধু খেতে পারেন। এছাড়াও মধুতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন , অ্যামাইনো এসিড এবং খনিজ লবণ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় পাওয়া গেছে খাঁটি মধুতে প্রায় 28 শতাংশ খনিজ লবণ রয়েছে। এছাড়াও 100 গ্রাম মধুতে 288 ক্যালোরি শক্তি রয়েছে। ( খাঁটি মধু খাওয়ার নিয়ম )
4 / মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্লি খেতে খুবই পছন্দ করতেন। বার্লি হচ্ছে এক ধরনের গম জাতীয় শস্যদানা। এটি উচ্চ প্রোটিনযুক্ত একটি খাবার। দেহে শক্তি সঞ্চালন এবং তাপ উৎপন্ন করতে এই খাদ্যটি খুবই কার্যকারী। এছাড়াও এখানে থাকছে গ্লুকোজ এবং ভিটামিন বি। কাজ করার জন্য আমাদের শক্তি প্রয়োজন এই খাদ্যটির মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপন্ন হয়। ( বার্লি কি থেকে তৈরি হয় )
5 / হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো একটি প্রিয় খাবার হল লাউ। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দাওয়াতে যাওয়ার পর সেখানে তার সামনে গোস্ত দিয়ে লাউ রান্না করে দেওয়া হয় সেখান থেকে তিনি গোশতের টুকরাকে আলাদা করে সেখান থেকে লাউ বেছে বেছে খেলেন। আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়ে থাকে আর এক্ষেত্রে লাউ আমাদের শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে এছাড়াও ডায়রিয়া জনিত পানি শূন্যতার জন্য লাউ খুবই কার্যকরি একটি খাবার। এছাড়াও আমাদের প্রস্রাবের সংক্রমণ রোধেও কিন্তু লাউ অনেক উপকারী একটি খাদ্য। ( লাউ এর পুষ্টি উপাদান )
6 / মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরমুজ এবং শসা একসাথে খেতেন। হাদিসে বলা হয়েছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরমুজের সাথে খেজুর খেতেন। তরমুজ এবং শসা দুটোর মধ্যে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় শরীরকে হাইড্রেট করে রাখতে পারে। শসা ত্বক এবং চামড়া মসৃণ রাখার জন্য খুবই উপকারি খাবার। এছাড়াও দেহ থেকে চর্বি কমানোর জন্য শসা অনেক কার্যকরী একটি খাদ্য। শসা হার্ট এর অনেক উপকারে আসে। শসা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে রক্তের মধ্যে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও কার্ডিওভেসকুলার রোগ প্রতিরোধের জন্য তরমুজ উপকারী একটি খাদ্য। ( ওজন কমাতে শসার উপকারিতা )
7 / আমাদের বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জলপাই খেতে পছন্দ করতেন। আর এই জলপাই খাওয়ার জন্য তিনি আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা জলপাইয়ের তেল খাও এবং জলপাই খাও কারণ জলপাই বৃক্ষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার বরকত রয়েছে। এছাড়াও জলপাইয়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। আমাদের অনেকের হার্ট ব্লক হয়ে যায় আর এই হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করে থাকে জলপাই। জলপাই এলার্জি প্রতিরোধ করার জন্য খুবই উপকারী একটি খাদ্য। ত্বক বা চামড়ার ইনফেকশন বা ক্ষত রোধ করার জন্য ভালো কাজ করে থাকে। জলপাই পাতাও কিন্তু এক ধরনের ভেষজ ঔষধ ক্ষত স্থানে এর পাতা লাগালে ক্ষত স্থান খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। ( জলপাই তেল খাওয়ার নিয়ম )
8 / প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডুমুর খেতেন। ডুমুর তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। ডুমুর ত্বক , চুল এবং নখ সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
ডুমুরের পেস্ট যদি আপনি আপনার মুখের উপরে মাখেন তাহলে আপনার মুখের ব্রণগুলো কমে যাবে। নিয়মিত ডুমুর খাওয়ার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। ডুমুর মরণব্যধি রোগ অর্থাৎ ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। ডুমুর খাবার ফলে শরীরের হাড় শক্ত হয় এবং দেহের গঠনে সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ডুমুর একটি উপকারী খাবার। ডুমুর কিডনির পাথর প্রতিরোধ সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ডুমুর খুবই কার্যকরী একটি খাদ্য। ( পাকা ডুমুর খাওয়ার নিয়ম )
9 / বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস খেতেন। হাদিসে বর্ণিত রয়েছে তিনি সকালে কিসমিস ভেজানো পানি এবং কিসমিস খেতেন। আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রক্তে লাল কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কিসমিস খুবই উপকারী একটি খাদ্য। শুকনো কিসমিস খাওয়ার থেকে ভিজিয়ে কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও পানিতে ভেজানো কিসমিস রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এর পাশাপাশি এসিডিটি কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। ( কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা )
10 / এছাড়াও বিশ্বনবী ( সঃ) ডালিম খেতেও পছন্দ করতেন। ডালিম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। ছাড়াও এখানে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি এর পাশাপাশি পটাশিয়ামের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ডালিম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত ডালিম খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারবেন। এছাড়াও দেহে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে ডালিম। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ( বেদানা খাওয়ার উপকারিতা )
11 / নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুর ফল খেতেন। আঙ্গুরে রয়েছে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ উপাদান। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তাদের জন্য আঙ্গুর ফল খুবই উপকারী একটি ফল। এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য আঙুর ফল খাওয়া ভালো। অ্যাজমা এবং হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য আঙ্গুর ফল খুবই ভালো ভূমিকা রাখে। এছাড়াও হৃদপিণ্ড এবং রক্ত নালিকে শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও আঙ্গুরের জুস শারীরিক গঠনে খুবই কার্যকারী। এছাড়াও মাথা ব্যথা , চোখের রেটিনার সুরক্ষা এবং ত্বকের জন্য কার্যকারী ফল হল আঙ্গুর। ( সবুজ আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা )
12 / মাশরুম নবীজির খুবই প্রিয় একটি খাদ্য ছিল। মাশরুম মূলত ভিটামিন বি, পটাশিয়াম , কপার এবং আয়রন সমৃদ্ধ একটি খাবার। বিভিন্ন দেশে এখন মাশরুম চাষ হয়ে থাকে। মাশরুম এর তরকারি খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিযুক্ত। মাশরুমে খুব কম পরিমাণে কার্বোহাইডেট থাকে ফলে ওজন বৃদ্ধি রোধ এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কম থাকে। এছাড়াও মাশরুমে কোলেস্টেরল খুব কম থাকে যার কারণে এটা খাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ সময় ক্ষুদা লাগে না। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মাশরুম খুবই উপকারী একটি খাদ্য। এছাড়াও মাশরুম খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। ( মাশরুম পাউডার খাওয়ার উপকারিতা )
13 / আরো একটি প্রিয় খাবার ছিল পনির। পনির নিয়মিত খাওয়ার ফলে হাড় এবং দাঁত মজবুত হয়। এছাড়াও পনির আমাদের দেহের ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করে। পনিরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। পনিরের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা শরীরের মধ্যে রক্ত রসের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়াও নিয়মিত পনির খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পনির খুবই উপকারী একটি খাদ্য। পনিরে রয়েছে ফোলেট যা ভ্রুণের বিকাশে সহায়তা করে। ( পনির কিভাবে তৈরি হয় )
14 / এরপরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাখন খেতে পছন্দ করতেন। মাখন খুবই ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার এখানে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি থাকে। মানব শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরিতে মাখন খুবই কার্যকরী প্রভাব রাখে। আমাদের শরীরে হাড়ের জয়েন্টে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সেটি মাখন এর মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। মাখন এর মধ্যে লিনোলেইগ এসিড থাকে। ক্যান্সার , হাড়ভাঙ্গা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে মাখন অনেক কার্যকরী একটি খাদ্য। মাখনে প্রচুর পরিমাণ খনিজ এবং আয়োডিন থাকে। ( ঘি খাওয়ার উপকারিতা )
15 / রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিনেগার বা সিরকা খেতে পছন্দ করতেন। ভিনেগার ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং হৃদরোগের সমস্যা ছাড়াও আরো বেশ কিছু সমস্যা জনিত রোগ থেকে প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিনেগার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও দেহের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার জন্য ভিনেগার বা সিরকা খুবই ভালো উপকারে আসে। ক্যান্সার প্রতিরোধে ভিনেগার কার্যকরী একটি খাদ্য। আমাদের দেহের ওজন কমানোর জন্য ভিনেগারের প্রভাব খুবই ভালো। ( সাদা ভিনেগার এর উপকারিতা )
আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে প্রিয় নবীর প্রিয় খাবার গুলো সম্পর্কে জানতে পারলেন। এছাড়াও প্রিয় নবী (সাঃ) তিনটি খাবার বর্জন করতেন আর সেগুলো কি কি ? এই বিষয়টি আপনাদের সামনে অন্য একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে আর সেজন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিতভাবে ভিজিট করতে পারেন। এই খাবার গুলোর মধ্যে কোন কোন খাদ্যগুলোকে আপনাদের খাদ্য তালিকায় রেখেছেন সেটা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। (মিজানুর রহমান আজহারী নতুন ওয়াজ)
0 মন্তব্যসমূহ