ঘুম হলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম একটি কারণ। আমাদের সকলের দৈনন্দিন প্রায় ৮ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমানোর দরকার। তবে ৮ ঘন্টা থেকে কম ঘুমালে আমাদের শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।আপনি যদি সত্যি বিছানায় যাবার জন্য তৈরি হন - তাহলে সহজেই ঘুম এসে যায়।তবে একজনের কাছে যা 'স্বাভাবিক' ঘুমানোর সময় - অন্য কেউ কেউ সে সময়টায় ঘুমাতে পারেন না।যদি আপনার এ সমস্যা থাকে - তাহলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব সময় প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন, এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই।বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এর ফলে রাত-জাগা লোকদের 'দেহ-ঘড়ি'কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নি:সৃত হয় - তা হয়তো আপনাকে ঘুমোতে দেবে না।আপনি যদি ছোট্ট শিশু না হন এবং আপনার কম ঘুম হয় - এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা - বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর - না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাতে ঘুম হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তো এবার আমরা চলে যাই ঘুমানোর বিস্তারিতসম্পর্কে আলোচনায়।
*নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো
*কক্ষের পরিবেশ শীতল রাখা
রুক্ষ আবহাওয়া থেকে তুলনামূলক শীতল কক্ষে ভালো ঘুম হয়। ঘুমানোর কক্ষটি হতে হবে কোলাহল মুক্ত, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে।
গবেষণায় দেখা যায় যে,
*ঘুমানো আগে ব্যায়াম করা
ঘুমানোর ৪-৫ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করলে, ভালো ঘুমের আশা করা যায়। কেননা আমাদের শরীর যখন ক্লান্ত হয়ে আসে তখন তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। কোন ভাবেই ঘুমানোর আগ মূহুর্তে ব্যায়াম করা যাবে না। কারণ, আমরা যখন ব্যায়াম করি তখন আমাদের শরীররে কোষ,অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল হয়ে ওঠে। সচল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্লান্ত হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই, ব্যায়াম শেষে গোসল দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ৪-৫ঘণ্টা পর ঘুমাতে গেলে প্রডাক্টিভ ঘুমের আশা করা যায়।
দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করার অভ্যাস করা
ভালো ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত আলো বাতাস-পূর্ণ স্থানে দিনের বেলায় কাজ করা খুব প্রয়োজন। কেননা, মানুষের মধ্যে বডি ক্লক থাকে। সাধারণত এই ক্লকের নির্দেশ অনুসারে আমাদের বডি কাজ করে। আপনি যদি দিনে পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করেন, তাহলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অর্থাৎ, আলো কমতে শুরু হলে বডি ক্লক ঘুমের জন প্রস্তুতি নেয়।
ঘুম আসার উপায়।
*আবার আপনার ঘুমানোর রুমে যখনই সকালের আলো প্রবেশ করে, তখন কিন্তু আপনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অপরপক্ষে যে রুমে আলো প্রবেশ করে না, সেখানে কিন্তু আপনার ঘুম সকালে সহজে ভেঙ্গে যায় না। বডি ক্লকের সাথে দিনের আলোর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে ইউরোপের ২ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ এক ধরনের ডিপ্রেশনে ভুগছে। এর নাম হলো সিজনাল ইফেক্টিভ ডিজঅর্ডার। এর একমাত্র কারণ হলো, দিনের বেলায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস না পাওয়া।
*কেননা পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে ছয় মাস দিন আর ছয়মাস রাত থাকে। যার ফলে অনেকক্ষেত্রে বডি ক্লক দিন – রাতের তারতম্য পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয়, যার কারণে ঐ অঞ্চলের মানুষের কাছে অর্থকড়ি অভাব না থাকা সত্ত্বেও ডিপ্রেশনে ভুগে।তাছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নাইট শিফটে কাজ করে তাদের ৯৭℅ লোক কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাশা ঘুম আসতে পরীপূর ব্যর্থ হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা বিভাগ “ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার” এর তথ্য মতে,
*যখন সূর্যের আলো থাকে না, তখন শরীর কে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখতে বাধ্য করলে শরীরের মেলাটনিনি হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে।এই হরমোনের কাজ হলো, দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করা। ফলে, বিশেষজ্ঞদের ধারনা রাত জাগা মানুষের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। তাই, রাতে ভালো ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করা জরুরী।
এই আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শের ভিত্তিতে।
0 মন্তব্যসমূহ