আমরা অনেক সময় নিজের বর্তমান দুর্দশা নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ি । হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু ধৈর্যের সঙ্গে চিন্তা করে দেখি না যে আমরা সবাই দুনিয়ায় আসার সময় প্রত্যেকেই সবার রিজিক নিয়ে এসেছি। রিজিকের বরাদ্দ আমাদের সবার জন্য আল্লাহর দরবার থেকে মানুষ সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে থেকেই নির্ধারিত করা হয়েছে।জীবিকার জন্য এমন দুশ্চিন্তা করা আমাদের উচিত নয়। সবাই তার জন্য বরাদ্দকৃত সময় ও জীবিকা শেষ করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে । আদম সন্তান দুনিয়ায় আসার আগেই আল্লাহ তাআলা তার জীবিকা লিখে রেখেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকে তার মায়ের পেটে ৪০ দিন শুক্র হিসেবে থাকে। অতঃপর সবাই রক্তপিণ্ড হয়ে যায়। অতঃপর মাংসপিণ্ডে রুপান্তরিত হয়। এরপর তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয়, সে তার মাঝে রুহ সঞ্চার করে আর তাকে চারটি বিষয় লিখে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় : ১,জীবিকা, ২,তার সময় বা বয়স ৩, সৌভাগ্যবান ৪,দুর্ভাগ্যবান । (বোখারি মুসলিম হাদিস থেকে জানা যায়)
<<<এ হাদিস থেকে আরো জানা যায়, আমাদের রিজিক আগে থেকেই নির্ধারিত । পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘বলো, আমার প্রতিপালক তো তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা রিজিক বর্ধিত করেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা ।' (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)
<<<সব মানুষের রিজিকদাতা মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ সবার ব্যাপারেই সজাগ থাকেন। তিনি কারো কথা ভুলে যান না । রিজিকের এই ফয়সালা হয় আকাশে । ইরশাদ হয়েছে, ' আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতোই এটা সত্য।' (সুরা জারিয়াত : ২১-২৩)।
***আজ আমরা রিজিক বৃদ্ধির উপায়সমূহের মধ্যে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক ১৪টি কার্যকরী আমল গুলুর বিষয় জানবো। যেগুলো নিয়মিত পালন করলে রিজিক অটোমেটিক বিধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
নাম্বার ১: তাকওয়া অবলম্বন করা
**তাকওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া এবং তার পথচলার জন্য আলোর ব্যবস্থা করাও তাকওয়ার একটি অন্যতম ফল। আল্লাহ তাআলা বলেন : হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আল হাদীস:২৮)।
**তাকওয়া অবলম্বনের আরেকটি ফযীলত হলো, তাকওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তির পরকালে নাজাত পেয়ে ধন্য হওয়া । ইরশাদ হয়েছে : আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপর আমি তাদেরকে মুক্তি দেব যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায় (সূরা মারিয়ম :৭১-৭২)।
**সুতরাং যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে এবং তার অনুগত্য করলে,
আল্লাহ তায়ালা সকল সংকট দোর করে দেবেন । এবং তা অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।
নাম্বার ২ :তওবা ও ইস্তেগফার করা
***অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে। আল্লাহ তাআলা তার অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন, ‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তার কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)
***হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১)
***অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ ( বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম , মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ সহীহ সূত্রে বর্ণিত)
নাম্বার ৩: রাসূল (সা:)-এর ওপর বেশি বেশি দরূদ পড়া
***রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে। তোফায়েল ইবন উবাই ইবন কা‘ব রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনার প্রতি অধিকহারে দরূদ পড়তে চাই, অতএব আমার দু‘আর মধ্যে আপনার দরূদের জন্য কতটুকু অংশ রাখব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ। তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে যদি তুমি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। কা‘ব বলেন, আমি বললাম, তাহলে দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও। তবে তুমি যদি বেশি পড় তা তোমার জন্য উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার দু‘আর পুরোটা জুড়েই শুধু আপনার দরূদ রাখব। তিনি বললেন, তাহলে তা তোমার ঝামেলা ও প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তিরমিযী : ২৬৪৫; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭ (আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি ‘হাসান’ সহীহ।)
নাম্বার ৪ : আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে। যেমন- আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯)
নাম্বার ৫: আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায় ও না। বরং তা বাড়ে বৈকি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তার বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিযিক দাতা।’ (সূরা আস- সাবা’, আয়াত : ৩৯)
নাম্বার ৬:বারবার হজ- উমরা করা
হজ ও উমরা পাপ মোথনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়। আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা হজ ও উমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ (তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১)
নাম্বার ৭:দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদা চার করা
মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তার বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (বুখারী : ২৮৯৬)
নাম্বার ৮: ইবাদতের জন্য ঝামেলা মুক্ত হওয়া
মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্য ঝামেলা মুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আবু হুরায়রা (রা:)কর্তৃক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,, মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন হে আদম সন্তান আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলা মুক্ত হও। আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরিয়ে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো তাহলে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরিয়ে দেবো অর্থাৎ তোমার অভাব দূর করব না।(তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭)
নাম্বার ৯: আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি নিমিত্তে হিজরত তথা স্বদেশ ত্যাগ করলে এর মাধ্যমেও রিজিকের প্রশস্ততা ঘটে। যেমনটি অনুধাবিত হয় নিচের আয়াতটি থেকে। আল্লাহ তাআলা বলেন ,, যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, হে জমিনের বহু আশ্রয় জায়গা এবং সচ্ছলতা পাবে। আর জে আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে তাহলে তার প্রতিদান মহান আল্লাহ তাআলার উপর অবধারিত হয় । আর আল্লাহতালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১০০) আয়াতের ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস প্রমুখ সাহাবী রাদিআল্লাহু আনহুদ বলেন, স্বচ্ছলতা অর্থ রিজিকে প্রশস্ততা।
নাম্বার ১০: আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জিহাদেও সম্পদের ব্যপ্তি ঘটে । গনীমত বা যুদ্ধ লগ্নের সম্পদের মাধ্যমে সংসারের প্রাচুর্য আসে । যেমন ইবন ওমর রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আর আমার রিজিক রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে।’ (মুসনাদ আহমদ : ৫৬৬৭; বাইহাকী : ১১৫৪; শু‘আবুল ঈমান : ১৯৭৮৩)
নাম্বার ১১: আল্লাহ তাআলার নেয়ামতে শুকরিয়া আদায় করা
সাধারণভাবে আল্লাহ তায়ালা যে রিজিক ও নীয়ামত রাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া করা ও তার স্তুতি গাওয়া। কারণ শুকরিয়া আর ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন যে ,, আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন , যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর , তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হ ও , নিশ্চিত আমার আজাব বড় কঠিন।সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ০৭) আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা শুকরিয়ার বদৌলতে নেয়ামত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর বলাবাহুল্য আল্লাহর বাড়ানোর কোনো সীমা-পরিসীমা নাই।
নাম্বার ১২: বিয়ে করা
আজকাল মানুষের দুনিয়ার প্রাচুর্য ও বিলাসের প্রতি আসক্তি এত বেশি বেড়েছে, তারা প্রচুর অর্থ নেই এ যুক্তিতে প্রয়োজন সত্ত্বেও বিয়ে বিলম্বিত করার পক্ষে রায় দেন। তাদের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে এ কথা যে, বিয়ের মাধ্যমেও মানুষের সংসারে প্রাচুর্য আসে। কারণ, সংসারে নতুন যে কেউ যুক্ত হয়, সে তো তার জন্য বরাদ্দ রিজিক নিয়েই আসে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্য ময় ও মহাজ্ঞানী।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩২)
উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু বলতেন, ওই ব্যক্তির ব্যাপার বিস্ময়কর যে বিয়ের মধ্যে প্রাচুর্য খোঁজে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দেবেন।’
নাম্বার ১৩:অভাবের সময় আল্লাহর মুখী হওয়া এবং তার কাছে দু‘আ করা
রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তা‘আলাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০)
এ আয়াতে আল্লাহ দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মা দারি নিয়েছেন। যাবৎ না তা কবুলে পথে কোনো অন্তরায় না হয়। যেমন ওয়াজিব তরক করা, হারাম কাজে জড়ানো, হারাম আহার গ্রহণ বা হারাপ পরিচ্ছদ পরা ইত্যাদি এবং কবুলকে খানিক বিলম্বিত করণ। আল্লাহর কাছে দু‘আয় বলা যেতে পারে, ‘হে রিজিকদাতা আমাকে রিজিক দান করুন, আপনি সর্বোত্তম রিজিকদাতা। হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পবিত্র সুপ্রশস্ত রিজিক চাই। হে ওই সত্তা, দানের ঢল সত্ত্বেও যার ভাণ্ডারে কমতি হয় না। হে আল্লাহ, আমাকে আপনি আপনার হালাল দিয়ে রেখে হারাম থেকে দূরে রাখুন। হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে রিজিক দিয়েছেন তা দিয়েই সন্তুষ্ট বানিয়ে দিন। আর যা আপনি আমাকে দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।’
অভাব কালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তার কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিত বিলম্বে আল্লাহ তাকে তরিৎ বা ধীর রিজিক দেবেন। (তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮)
নাম্বার ১৪:গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর সর্বদা অটল থাকা
গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয় যেমন পূর্বোক্ত আয়াত গুলো থেকে অনুমান করা যায়। তবে সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা দুনিয়াতে চিরদিন থাকার জন্য আসি নি। তাই দুনিয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে উচিত হবে আখিরাতকে অগ্রাধিকার ও প্রাধান্য দেয়া। আমাদের এমন অবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাতের সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’ (সূরা আল-আ‘লা, আয়াত : ১৬-১৭)
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা। যেমন : হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে (অভাবও নয়; বিলাস ও নয়) পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্ট ও করেছেন। (মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২)
***
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি , তিনি যেন আমাদের এসব উপায়-উপকরণ যোগাড় করে রিজিক তথা হালাল উপার্জনে উদ্যোগী ও সফল হবার তাওফীক দান করেন। তিনি যেন আপনাদের রিজিক ও উপার্জনে প্রশস্ততা দান করেন। আমীন।
0 মন্তব্যসমূহ