কম্পিউটারের অর্থ কি?
ল্যাটিন শব্দ কম্পিউটেয়ার (Computare) থেকে ইংরেজিতে কম্পিউটার (Computer) শব্দটির উৎপত্তি। Compute শব্দের অর্থ হলো গণনা করা। তাই কম্পিউটারের আভিধানিক অর্থ হলো গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র।
কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক বর্তনী ও যান্ত্রিক সরঞ্জামের সমন্বয়ে সংগঠিত প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ডেটা গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াকরণ করে, ফলাফল সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে ফলাফল প্রদান করে।অর্থাৎ কম্পিউটার এমন এক ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা ইনপুট হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাসমূহ কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে আউটপুট হার্ডওয়্যারসমূহের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে থাকে।অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে, 'কম্পিউটার হলো হিসাব-নিকাশ করা অথবা অন্য কোনো যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যা তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং উৎপাদন করে।আসলে কম্পিউটার হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিকস যন্ত্র, যা সংরক্ষিত প্রোগ্রামের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারে।যেমন কম্পিউটার দিয়ে গাণিতিক হিসাব যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা যায়; এমনকি যুক্তি এবং সিদ্ধান্তমূলক কাজও করা যায়। এছাড়া আমরা কম্পিউটারের সাহায্যে গান দেখতে ও শুনতে পারি এবং বিভিন্ন ধরনের গেমসও খেলতে পারি। গবেষণামূলক কাজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, এমনকি ব্যক্তিগত কাজেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি :-
বর্তমান বিশ্বে ব্যবহৃত কম্পিউটার গুলিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যথা কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ।গঠন ও কাজের প্রকৃতির অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ এবং
আকার, আকৃতি, আয়তন ও কার্যকারিতা অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ।
কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ :-
কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটারকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-
সাধারণ কাজের ব্যবহারের কম্পিউটার (General Purpose Computer) ও
বিশেষ কাজের ব্যবহারের কম্পিউটার (Special Purpose Computer)
সাধারণ ব্যবহারের কম্পিউটার :-
সাধারণত যে সমস্ত কম্পিউটার দ্বারা বহুমুখী কাজ করা যায় সে সমস্ত কম্পিউটারকে বহুমুখী ব্যবহার কারি কম্পিউটার বলা হয়।বর্তমানে প্রচলিত মাইক্রোকম্পিউটার থেকে শুরু করে সুপার কম্পিউটার পর্যন্ত সকল কম্পিউটারই বহুমুখী ব্যবহারের পুরাতন প্রোগ্রাম মুছে ফেলতে পারেন কিংবা এক সঙ্গে একাধিক প্রোগ্রামের সাহায্যে বহুবিদ কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারেন।এ ধরনের কম্পিউটারের সাহায্যে একই সঙ্গে লেখালেখির কাজ, চিত্রাঙ্কন ও হিসাব-নিকাশের কাজ ছাড়া আরও অনেক রকমের কাজ করা যায়।
অর্থাৎ এ ধরনের কম্পিউটারে ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ যেমন- অফিস, আদালত, প্রকাশনা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি কাজে সাধারণ এ ধরনের কম্পিউটার গুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার :-
যে কম্পিউটার বিশেষ ধরনের কাজ বা সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয়ে তাকে বিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার বলা হয় বা সুপার কম্পিউটার বলা হয় ।এক ধরনের কাজের জন্য তৈরি এ ধরনের কম্পিউটার সাধারণত অন্য ধরনের কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ জন্য এ ধরনের কম্পিউটারগুলোকে বলা হয় বিশেষ ব্যবহারের কম্পিউটার।যেমন আবহাওয়া ভূমিকম্প, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, আলট্রাসনোগ্রাফি, ভিডিও গেমস, রকেটের গতি নিয়ন্ত্রণ, চক্ষু পরীক্ষা, মল-মূত্র ও রক্ত পরীক্ষা বা বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলোই হলো বিশেষ ধরনের কম্পিউটার যাকেই সুপার কম্পিউটার হিসেবেই ডাকা হয় । অবশ্য এ ধরনের কম্পিউটারে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম পূর্ব থেকেই স্থাপন করে দেয়া হয়।
প্রকৃতির অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ :-
গঠন ও কাজের প্রকৃতি অনুসারে কম্পিউটারকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
*অ্যানালগ কম্পিউটার ( Analog Computer)
*ডিজিটাল কম্পিউটার ( Digital Computer)
*হাইব্রিড কম্পিউটার ( Hybrid Computer)
অ্যানালগ কম্পিউটার কাকে বলে?
যে সকল কম্পিউটার বৈদ্যুতিক সংকেতের ওপর নির্ভর করে ইনপুট গ্রহণ করে প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পাদিত করে, সেসব কম্পিউটারকে অ্যানালগ কম্পিউটার বলা হয়।তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটারে বর্ণ বা অংকের পরিবর্তে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল বা অ্যানালগ বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের পর প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণত মিটার, ওসিলোসকোপ ইত্যাদিতে প্রদর্শিত হয়। মোটরগাড়ির স্পিডোমিটার, প্লাইড রুল, অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার ইত্যাদি অ্যানালগ কম্পিউটারের উদাহরণ।সাধারণত চাপ, তাপ, তরল পদার্থের প্রবাহ ইত্যাদির উঠা নামা বা হ্রাস-বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া গাড়ি, উড়োজাহাজ, মহাকাশ যান ইত্যাদির গতিবেগ, বায়ু, তরল ও কঠিন পদার্থের চাপ এবং কোনো বিশেষ স্থানের বা কক্ষের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। অ্যানালগ কম্পিউটারের ফলাফলের সূরুক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে কম।
ডিজিটাল কম্পিউটার কাকে বলে?
যে সকল কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, সেসব কম্পিউটারকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলা হয়।তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটার বৈদ্যুতিক সিগন্যালের পরিবর্তে ডিজিট (0/1) ব্যবহার করে। ডিজিটাল কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিসাবের পর প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণত মনিটরে প্রদর্শিত হয়। ডিজিটাল কম্পিউটারের গতি ও কার্যকারিতা অ্যানালগ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি ও ভালো।আবার ডিজিটাল কম্পিউটারের ফলাফলের সূরুক্ষ্মতা অ্যানালগ কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমান বাজারে প্রচলিত প্রায় সকল কম্পিউটারই ডিজিটাল পদ্ধতির কম্পিউটার। মাইক্রোকম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার হচ্ছে ডিজিটাল কম্পিউটারের উদাহরণ।আমাদের প্রাত্যসিত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষণামূলক কাজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, ব্যাংক, বিমা, ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, লেখাথুলা, বিনোদন- এমনকি ব্যক্তিগত কাজেও ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে সকল কাজেই এখন কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে ।
হাইব্রিড কম্পিউটার
অ্যানালগ ও ডিজিটাল উভয় কম্পিউটারের নীতির সমন্বয়ে যে কম্পিউটার গঠিত তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলা হয়।একে সংকর কম্পিউটারও বলা হয়। হাইব্রিড কম্পিউটারে সাধারণত উপাত্ত সংগৃহীত হয় অ্যানালগ প্রক্রিয়ায় এবং সংগৃহীত উপাত্ত সংখ্যায় রূপান্তরিত করে ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করা হয়। ডিজিটাল অংশ প্রাপ্ত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের পর ফলাফল প্রদান করে।হাইব্রিড কম্পিউটার অত্যন্ত দামি। তাই কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়; যেমন- মিসাইল, সমরাস্ত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নভোযান, রাসায়নিক দ্রব্যের গুণাগুণ নির্ণয়, পরমাণুর গঠন প্রকৃতি নির্ণয়, পরীক্ষাগারে ঔষধের মান নির্ণয় ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার, শরীরের তাপমাত্রা রোগীর রক্তচাপ, হৃত্যন্ত্রের ক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আয়তন ও কার্যকারিতা অনুসারে কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ :-
আধুনিক যুগে কম্পিউটার বলতে আমরা ডিজিটাল কম্পিউটারকে বুঝি। বর্তমানে প্রায় সর্ব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে। আকার, আয়তন, কাজ করার ক্ষমতা, স্মৃতি ও কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে বা ডিজিটাল কম্পিউটারকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
*সুপার কম্পিউটার (Supercomputer)
*মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
*মিনি কম্পিউটার (Minicomputer) ও
*মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer)
সুপার কম্পিউটার
সুপার কম্পিউটার হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী, ব্যয়বহুল ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটার। সুপার কম্পিউটার একসাথে একাধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত মেমরি এবং বিপুল পরিমাণ প্রক্রিয়াকরণ কাজের ক্ষমতা থাকে।আবার এ ধরনের কম্পিউটারগুলোতে কয়েকটি প্রসেসর একই সঙ্গে কাজ করে এবং প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক ও প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পাদন করে।সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ, নভোযান, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ গবেষণা, বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ডিজাইন, সিমুলেশন, পারমাণবিক চুল্লির নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ইত্যাদি কাজে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এক কথায় উচ্চমানের কাজগুলো করা হয় এই কম্পিউটার দিয়ে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মাইক্রো ও মিনি কম্পিউটার অপেক্ষা মেইনফ্রেম কম্পিউটার আকৃতিতে বড় কিন্তু সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট। মেইনফ্রেম কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি কম্পিউটার যার সঙ্গে অনেক ছোট ছোট কম্পিউটার যুক্ত করে একসঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারে এক বা একাধিক কেন্দ্রীয় প্রসেসর থাকে বিধায় অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন, তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা অনেক বেশি।এ ধরনের কম্পিউটারে অনেক বড় বড় এবং জটিল ও সূক্ষ্ম কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন, ব্যুরো, ব্যাংক, বিমা, বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিপুল তথ্য আদান প্রদান, সংরক্ষণ এবং জটিল ও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং বৈজ্ঞানিক কর্মতৎপরতা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়নের জন্য মেইনফ্রেম কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।UNIVAC 1100, NCR 8000, IBM 4300 ইত্যাদি মেইনফ্রেম কম্পিউটারের উদাহরণ। IBM এর নির্মিত 213 হল বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালি মেইনফ্রেম কম্পিউটার। এটি প্রতিদিন 250 শেটি তথ্য আদান প্রদান করতে পারে।
মিনি কম্পিউটার
Mini Computer সাধারণত মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট আকারের কিন্তু মাইক্রোকম্পিউটারের চেয়ে কিছুটা বড় আকারের কম্পিউটারকে বলা হয় মিনি কম্পিউটার।এ ধরনের কম্পিউটারের গতি, মেমরি এবং কাজ করার ক্ষমতা মাইক্রোকম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও কিছু মিনি কম্পিউটার একজন ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপযুক্ত কিন্তু বেশির ভাগ মিনি কম্পিউটারেই একই সাথে অনেকগুলো টার্মিনালে কাজ করা যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হাসপাতাল, বড় বড় কারখানা, বহুজাতিক কোম্পানি, প্রযুক্তিগত গবেষণায় ও বিশ্লেষণ কাজে মিনি কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
PDP-II, IBM S/34, IBM S / 36, NCR S/9290 NOVA3 ইত্যাদি মিনি কম্পিউটারের উদাহরণ।
মাইক্রোকম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটারের মধ্যে সবচেয়ে আকারে ছোট এবং সম্ভা কম্পিউটার হচ্ছে মাইক্রোকম্পিউটার। মাইক্রো এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র। তাই ক্ষুদ্রাকৃতির মাইক্রোপ্রসেসর চিপ দিয়ে যে সকল কম্পিউটার গঠিত হয় সেসব কম্পিউটারকে বলা হয় মাইক্রোকম্পিউটার।এ ধরনের কম্পিউটার সাধারণত একটি মাইক্রোপ্রসেসর প্রধান মেমরি, সহায়ক মেমরি এবং ইনপুট আউটপুট যন্ত্রপাতি নিয়ে গঠিত।একজন ব্যবহারকারী একাই একটি মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন বলে এ ধরনের কম্পিউটারকে ব্যক্তিগত বা পার্সোনাল কম্পিউটারও বলা হয়।এ ধরনের কম্পিউটার দামে সস্তা, আকারে ছোট, সহজে বহনযোগ্য এবং রক্ষণাবেক্ষণ সহজ বিধায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কাছে খুবই জনপ্রিয়।অফিসের কাজ ও বাণিজ্যিক প্রয়োজন ছাড়াও শিল্পক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে, স্বয়ংক্রিয় অফিস ব্যবস্থাপনায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালির কাজে, খেলাধুলায়, চিত্র-বিনোদন, এমনকি ব্যক্তিগত কাজেও আজকাল জনপ্রিয়তার সাথে মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
IBM PC, Apple Macintosh, TRS80 HP 85 IBM Pentium, Power PC. ইত্যাদি মাইক্রোকম্পিউটারের উদাহরণ।
মাইক্রো কম্পিউটারের শ্রেণিবিভাগ
প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে মাইক্রোকম্পিউটারের আকৃতিতে নানা রকম পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের ব্যবহারিক সুবিধার প্রতি লক্ষ রেখে বিভিন্ন আকৃতির মাইক্রোকম্পিউটার বাজারে এসেছে। যেমন
১. পামটপ কম্পিউটার (Palmtop Computer) বা পিডিএ (PDA)
২. ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer )
৩. নোটবুক কম্পিউটার (Notebook Computer)
৪. ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer); ইত্যাদি
এছাড়া ট্যাবলেট পিসি (Tablet PC), ফ্যাবলেট (Phablet), স্মার্টফোন (Smartphone) ইত্যাদিও মাইক্রোকম্পিউটারের অন্তর্ভুক্ত।
কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয়?
কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয় লিখা শুরু করলে, হয়তো শেষ হবে না। যদিও এই যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হয় মূলত হিসাব বা গণনা যন্ত্র হিসেবে, জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার জন্য। তবে বর্তমানে এমন কোনো কাজ নেই যাতে কম্পিউটারের ব্যবহার নেই।
তাই চলুন এবার জেনে নেই কম্পিউটার কী কী কাজে ব্যবহার হয়, যেগুলো না জানলেই নয় –
শিক্ষা ক্ষেত্রে
শিক্ষা ক্ষেত্রে Computer কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো কোভিট-১৯ মহামারীর সময় সবাই উপলব্ধি করেছেন । প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহার হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন তৈরি থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন, এই সবগুলো কাজ এই যন্ত্রটির সাহায্য ছাড়া এখন কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
অনলাইন ইনকাম এর ক্ষেত্রে
বর্তমান সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কাজ সহ অনলাইনে ইনকাম করার জন্য এই কম্পিউটার ব্যবহার করা খুবই অত্যাবশ্যকীয় বা এর বিকল্প কিছু নেই।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে
চিকিৎসাক্ষেত্রে যে কোনো রোগ নির্ণয়ে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটারাইজড ডায়াগনোস্টিক সিস্টেম। ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফ, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান , mi পরীক্ষা থেকে শুরু করে অপারেশন ছাড়া পিত্তথলির পাথর অপসারণের জন্য ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের সব কাজে এই যন্ত্রটির প্রয়োজন হয়।
গবেষণার ক্ষেত্রে
আধুনিক সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা যে কোনো গবেষণার কাজে অপরিহার্য মাধ্যম কম্পিউটার। কারণ এটি দিয়ে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সংরক্ষণ এবং জটিল গণনাকে অতি দ্রুত করা যায় খুব সহজেই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও তথ্য সঞ্চয় করে রাখতে কম্পিউটার অবদান অনেক।
বিনোদনের ক্ষেত্রে
বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারে ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ভিডিও গেমস খেলা, মুভি দেখাসহ কিংবা অ্যানিমেশন ও স্পেশাল এফেক্ট তৈরির কাজ এই যন্ত্রটি ছাড়া করা যায় না।
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম কম্পিউটার ছাড়া এখন আমরা ডিজিটাল কোন কাজই শুরু করতে পারবো না। আপনাদের কি মনে হয়? এই বিষয়ে জানিয়ে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
0 মন্তব্যসমূহ