প্রায় প্রত্যেকেই সম্পদ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে, তবে দৈনন্দিন জীবনে অনেকের জন্যেই এই লক্ষ্যকে কঠিন করে তোলে। তবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশিদের জন্য তা প্রায় অসম্ভব। সেই জন্য আপনার উপার্জনের একটা ক্ষুদ্র অংশ এমন কিছুতে বিনিয়োগ করা উচিৎ, যা পরবর্তীতে আপনার আয়ের উৎস হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আপনার সম্পদ হয়ে উঠবে। যদিও বেশিরভাগ বাংলাদেশিরাই তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাতে পছন্দ করেন, ।সুচিন্তিত বিনিয়োগ আপনাকে আয় উপার্জন করতে এবং ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষায় সম্পদ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে। অতএব, শুধুমাত্র আপনার জীবনের বর্তমান অবস্থা, দীর্ঘমেয়াদী চাহিদা, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগের সঠিক পরিকল্পনাটি বাছাই করা কঠিন। পরিপূর্ণ সঞ্চয় পরিকল্পনার তুলনায়, একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা আপনাকে আর্থিকভাবে আরও বেশি লাভবান করে তোলতে পারে । তবে মনে রাখতে হবে বিশ্বাস্ত ও সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেন নিজ দায়িত্বে তবে যেখানে ঝুঁকি বেশি সেখানে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবেন।
মানি ম্যানেজমেন্ট কি?
মানি ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে কোন যায়গায় স্মার্টলি আমাদের টাকা ইনভেস্ট করা, যাতে আমাদের টাকা ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং আমরা নিজেদের বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে করতে পারি, অর্থাৎ কম কম খরচ করেবেশি বেশি সঞ্চয় করতে পারি (বিনিয়োগ)।অর্থবা টাকা এমন জায়গায় আপনে বিনিয়োগ করতে পারেন, যেখান থেকে ভবিষ্যতে যে কোনও ভাল বা খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের সময় মোকাবেলা করা যেতে পারে (সংরক্ষিত) সেই বিনিয়োগ করার টাকা দিয়ে ।এমন পরিস্থিতিতে, এমনকি যদি আপনি আপনার কোনো চাকরি থেকে বঞ্চিত হন বা আপনার আয় কমে যায়, তবে আপনি সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনার অর্থের সহায়তা নিতে পারেন সেখান থেকে ।তাহলে ঐ সময় আপনার করা মানি ম্যানেজমেন্ট আপনার জন্য খুবই কাজে আসবে। মানি ম্যানেজমেন্ট মানে হচ্ছে- আপনার অর্থ ব্যবস্থাপনা। আপনি যে অর্থ উপার্জন করেন, তার কত শতাংশ আপনার প্রয়োজনে ব্যয় হয় এবং কত শতাংশ সঞ্চয় ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
মানি ম্যানেজমেন্ট করার কিছু টিপস
আসুন এখন কথা বলি কিভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট করা হয় বা আপনি কিভাবে Money Management শুরু করবেন? তার জন্য বেশ কিছু টিপস বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে নিচে উল্লেখ করা হলো।
নাম্বার ১:
আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা ( মাসে কত খরচ)
আপনার অর্থ পরিচালনা করার জন্য, আর্থিক লক্ষ্য অর্থাৎ আর্থিক পরিকল্পনা নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তবেই আপনি আপনার অর্থ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন, অর্থাৎ মাসে আপনি কত টাকা আয় করছেন ?ও ব্যয় করেন? সে হিসাব আপনাকে সর্ব প্রথম বুঝতে হবে ।মাসিক বা বাৎসরিক ব্যয় মিটিয়ে আপনার কাছে টাকা থাকলে আপনি স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইপি ইত্যাদিতে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগ করতে পারেন।এটি আপনাকে ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে।
নাম্বার ২:
সেভিং অ্যাকাউন্ট যথেষ্ট জরুরী অর্থ জমিয়ে রাখতে
আজকের সময়ে আমাদের কখন কী হবে তা আমরা কেউ জানি না। তবে এটা জানার আমাদের কোন সাধ্য ও নেই।তাই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আগামীকালের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরুরী সময় বা প্রয়োজনীয় সময় যাতে এখান থেকে টাকা নিয়ে চলা যায় ।
নাম্বার ৩:
সঞ্চয়ের সঠিক বিকল্প নির্বাচন করা।
আপনার এবং আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য অবশ্যই জীবন বীমা নিতে হবে, এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য জীবনের ঝুঁকিগুলিকে কভার করে৷যদি আপনার পরিবারের জন্য আর্থিক দায়িত্ব থাকে, তাহলে আপনার মেয়াদী বীমা পাওয়া উচিত যা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে আপনার আয়ের ক্ষতিপূরণ দেয় এবং অন্য একটি স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনা, যা আপনাকে হাসপাতাল প্রয়োজনে চিকিৎসা খরচ বহন করতে সাহায্য করবে। তাই আপনাকে সঞ্চয়ের সঠিক বিকল্পের উপর ভালোভাবে নির্বাচন করতে হবে।
নাম্বার ৪:
ঋণের ব্যবহার কমিয়ে ফেলা
ঋণ অনেক সময় মানুষকে বিপদে ফেলে দেয়।কেননা আপনার সময়ের পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, আপনাকে আপনার ঋণ শোধ করতেই হবে।এবং সময়মতো EMI-এর অর্থ পরিশোধ না করা আপনার ক্রেডিট স্কোরকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে আপনার জন্য আবার ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।তাই আগে থেকে এমনভাবে চেষ্টা করুন যাতে আপনাকে ঋণ নিতে না হয়। কারণ ঋণের মধ্যে থাকা আর্থিক বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।তাই সবসময় একটি ভাল ঋণ ব্যবস্থাপনা করুন, যাতে আপনার বৃদ্ধি ক্রমাগত চলতে থাকে।
মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কি রকম লেগেছে? সে বিষয়ে জানিয়ে আমাদের কমেন্টের করতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ