ভিডিও দেখার জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ইউটিউব। আজকাল যেকোন ভিডিও দেখতে ইউটিউবের বিকল্প নেই।তবে ইউটিউব এখন শুধু বিনোদনের স্থানেই সীমাবদ্ধ নেই। এই ইউটিউবে আমরা একাধারে যেমন বিভিন্ন নাটক, সিনেমা দেখি তেমনি আবার কোন স্থানের ভিডিও দেখি আবার পড়াশোনা বিষয়ক ভিডিও ও দেখতে পাই।এখন ইউটিউব শুধুমাত্র নাটক, সিনেমায় সীমাবদ্ধ নেই। এর দ্বারা এখন টাকা ও আয় করা যায়। আজকের দুনিয়ায় কেউ শুধু ঘরে বসে সময় নষ্ট করে না। প্রতিযোগীতার এই যুগে সবাই চায় টাকা কামাতে।এখানে আমি আপনাদের জানাব কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করা যায়। আমি শেয়ার করলাম বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার সবচেয়ে সেরা ও বেশি উপার্জনকারী ৭ উপায় নিয়ে। যেগুলো আপনি সহজেই ঘর বসে এবং আপনার মোবাইল থেকেই শুরু করতে পারেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক digital Bangla 360 এর মাধ্যমে।
{1}গুগল এডসেন্স থেকে আয়
ইউটিউব থেকে আয় করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে গুগল এডসেন্স থেকে আয়। এখন এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কারণ এর জন্য ভাল ভিডিও বানানো ছাড়া তেমন কোনো পরিশ্রম করতেই হয়না। এখন Youtube Shorts থেকেও গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করা যায়।আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার যদি ১০০০ এর বেশি হয় এবং গত ১২ মাসে যদি চ্যানেলে ওয়াচ টাইম কমপক্ষে ৪০০০ ঘন্টা হয় তাহলে আপনি এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার চ্যানেল যদি উপযুক্ত হয় তাহলে অনুমোদন পেয়ে যাবেন আর গুগল এডসেন্স থেকে আয় করতে পারবেন।আপনার প্রতিটি ভিডিওর সাথে গুগল বিজ্ঞাপন যুক্ত করে দিবে। বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় হবে তার 45% আপনাকে দেয়া হবে। আপনার একাউন্টে ১০০ ডলার জমলে সেটা তখন আপনি তুলতে পারবেন।
{2}ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম থেকে আয়
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সরাসরি ইউটিউবের পার্টনার হওয়া যায়। এর সাহায্যে শুধু যে গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে ইনকাম করা যায় তা নয়, ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হলে ইউটিউবের অন্যান্য প্রোগ্রামের সাথেও যুক্ত হওয়া যায়। যেমন: ইউটিউব চ্যানেল মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম, সুপার চ্যাট ইত্যাদি।এতে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনার চ্যানেল মনিটাইজ করতে হবে। এর কিছু শর্ত রয়েছে। এই শর্ত গুগল এডসেন্স এর সাথে যুক্ত হওয়ার মতই। সবকিছু ঠিক থাকলে ইউটিউব মনিটাইজেশনের আবেদন করতে হবে। ইউটিউব সব যাচাই করে অনুমোদন দিবে।
{3}অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্য কারো পন্য আপনি রেফার বা প্রমোট করে সেল করানো। আপনার রেফারেন্সে কেউ পন্য কিনলে আপনি পাবেন বিক্রয়মুল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে কমিশন।অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বেশি টাকা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। যত বেশি বিক্রয় তত বেশি কমিশন। এখানে কোন লিমিট নেই।আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেশি থাকলে আপনি অনেক ভাল আয় করতে পারবেন। আপনার কমিশনের টাকা আপনার অ্যাফিলিয়েট একাউন্টে জমা হবে। নির্দিষ্ট এমাউন্ট হলেই ব্যাংকের মাধ্যমে সেগুলো উত্তোলন করতে পারবেন।
{4}স্পন্সরশিপ থেকে আয়
চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বেশি হলে স্পন্সর করেও টাকা আয় করা যায়। আপনি আপনার ভিডিওতে নির্ধারিত কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে সেখান থেকে একটা কমিশন পেতে পারেন।সেলিব্রেটিরা বা বড় বড় ইউটিউবার রা স্পন্সরশিপ থেকে ভালো ইনকাম করে থাকে। এটা অনেকটা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয়ার মত। ইউটিউব থেকে আয়ের এটা বেশ ভালো একটা উপায়। ভালো ইনকাম করা যায় এখান থেকে।
{5}নিজের পণ্য বিক্রি করে আয়
নিজের পণ্যের প্রচার, প্রচারণার জন্য ইউটিউব একটি চমৎকার জায়গা। এখানে নিজের পণ্যের ভিডিও তৈরি করে, তার সাথে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ খুব সহজেই যুক্ত করা যায়।তবে এর জন্য অবশ্যই চ্যানেলটি জনপ্রিয় হতে হবে। ইউটিউব থেকে আপনার পণ্য বিক্রি তখনই নিশ্চিত হবে যখন আপনার চ্যানেলটি জনপ্রিয় হবে। অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি এ দিককে কাজে লাগাচ্ছে।চ্যানেলে পণ্য দেখানোর পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজের লিংকে সেখানে এড করে দিতে হবে যাতে ভিজিটররা সহজেই সেখান থেকে অর্ডার করতে পারে।
{6}ইউটিউবে অনলাইন কোর্স বিক্রয় করে আয়
ইউটিউব আজ একটি বড় শিক্ষকে পরিণত হয়েছে। ইউটিউবে নেই এমন কিছু নেই। রান্না থেকে শুরু করে সেলাই, বেকিং, পড়াশোনা সব পাওয়া যায় এখানে।যে জীবনে রান্না করে নাই সেও ইউটিউব দেখে দেখে তিনবেলার খাবার রান্না করে ফেলে। কাজেই আপনিও আপনার বিভিন্ন কোর্স বিক্রি করতে ইউটিউবকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে দেয়া আপনার ভিডিও গুলি সহজ ও ইউনিক হতে হবে। যাতে তা দেখে সাধারন মানুষ কিছু শিখতে পারে, জানতে পারে।আপনি যদি রান্না সম্পর্কে অভিজ্ঞ হন তাহলে বিভিন্ন রান্নার ভিডিও এড করতে পারেন। সচরাচর পদ্ধতি ছাড়া একটু ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে, যাতে ভিউ বেশি হয়।তাছাড়া আজকাল অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার বিষয়ে ইউটিউব সার্চ করতে পছন্দ করে। সেখানে আপনি বিভিন্ন টপিক নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। ইংলিশ বিভিন্ন কোর্স, সেলাই শিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আপনি কোর্স তৈরি করে পাব্লিশ করতে পারেন।
{7}প্রোডাক্ট রিভিউ করে আয়
বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর রিভিউ এড করেও আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। এর জন্য ও আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বেশি হতে হবে। আর সাবস্ক্রাইবার রা একটিভ হতে হবে। কারন নিয়মিত তারা যদি আপনার ভিডিও না দেখে তাহলে প্রোডাক্ট রিভিউ ও দেখবেনা।বিভিন্ন কোম্পানির যেসব প্রোডাক্ট আপনি ব্যবহার করেছেন সেগুলোর একটা একটা করে ভিডিও তৈরি করতে পারেন আর চ্যানেলে দিতে পারেন। এই রিভিউ দেখে কোম্পানির কোনো পণ্য বিক্রি হলে আপনি তা থেকে কমিশন পাবেন।
ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার শর্ত
ইউটিউব থেকে আয় করার প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকতে হবে। আর তাতে ভালো সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। চ্যানেল জনপ্রিয় না হলে আয় কর যাবে না।আবার YouTube Partner Program ও Google Adsense থেকে আয় করতে অবশ্যই চ্যানেলে 1000 Subscriber এবং বিগত ১২ মাসে 4000 Hours Watch Time থাকতে হবে।এক্ষত্রে আপনার কি পরিমাণ আয় হবে তা নির্ভর করবে আপনার ভিডিওতে কি পরিমান ভিউ হচ্ছে আর মোট কতখানি সময় ভিডিও দেখা হচ্ছে তার উপর। যত বেশি বিজ্ঞাপন ভিজিটর দেখবে, ক্লিক করবে তত বেশি আয় হবে।
ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায়
ইউটিউব থেকে টাকা তোলার জন্য আপনার একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। Google AdSense একাউন্টে ১০০ ডলার হলে তা প্রতিমাসের ২১-২২ তারিখে আপনার ব্যাংক একাউন্টে Wire Transfer এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা হতে ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগে।
শেষ কথা
ইউটিউবে শিক্ষনীয় ও উপকারী ভিডিও আপলোড করলে খুব দ্রুতই আপনার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার বেড়ে যাবে। যত বেশি সাবস্ক্রাইবার তত বেশি আপনার আয়। ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য অবশ্যই ইউটিউবের গাইডলাইন মেনে ভিডিও বানাতে হবে। কপি কনটেন্ট ও ইমেজ ব্যবহার করা যাবে না।
0 মন্তব্যসমূহ