বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ছাত্র জীবনে আয় করার উপায় তুলনামূলক ভাবে কমই আছে যার অন্যতম কারন আমাদের দেশের মানুষেরা ছোট ছোট কাজ গুলোকে প্রায় অবজ্ঞা করে যায়। বাইরের কোনো উন্নত দেশ গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানের প্রায় প্রতিটি ছাত্র নিজের হাত খরচের টাকা কোনো না কোনো কাজ করার মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে। তবে আমাদের দেশের চিত্র যে একেবারেই তেমন নয় সেটা বলাও যাবে না। কারন আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা নিজের খরচ নিজে বহন করে ছাত্র থাকা অবস্থায়। তাহলে তারা করে কি?
আপওয়ার্ক ডট কম
আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্সারদের স্বর্গরাজ্য। ব্যক্তিবিশেষ কিংবা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত বিরতিতে আপওয়ার্কে কাজ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে আর্টিকেল লেখার কাজ, ভিডিও ইডিটিং এর কাজ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ট্রান্সলেট, ফেসবুক পেজ কভার ডিজাইন ইত্যাদি ইত্যাদি।আপওয়ার্কের সৌন্দর্য্য হচ্ছে, খুব সহজেই আপনি এখানে নিজের জাত চেনাতে পারবেন, এখানে জটিল কাজই যে আছে তা কিন্তু নয় আপনি পারেন এমন অনেক ছোট ছোট কাজ রয়েছে যেগুলোর প্রতিটির জন্য ৫ থেকে ১০ডলার আয় করে নিতে পারবেন।এমন যদি হয় যে আপনার বিশেষ কোনো দক্ষতা আছে, হতে পারে আপনার টাইপিং স্পিড ভালো কিংবা ভয়েস সুন্দর, তাহলে ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। আপনার অন্য চাহিদাসম্পন্ন কোনো দক্ষতা আছে, তাহলে চাইলেই ছাত্র অবস্থায় আপওয়ার্কে আয় করতে পারবেন।স্টুডেন্ট হিসেবে আপনার অনলাইন ইনকাম করার মতো অনেক বিষয়েই আইডিয়া রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আপনাকে শুধু কোনো একটা বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।টিপ্স: যত দক্ষতাই থাকুক না কেন, নিজের প্রোফাইল সঠিকভাবে না সাজালে ভাঁড়ে ভবানী। তাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়েই সাজিয়ে নিন নিজের প্রোফাইল, যা আপনার কাজ পাবার সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।আপনার করা সবথেকে ভালো কাজটা প্রদর্শনীতে রাখুন এবং বিশেষ দক্ষতাগুলো প্রোফাইলে ফুটিয়ে তুলুন। যদি নিজেকে সবার থেকে একটু আলাদা উপরে দেখতে চান আর কি!
ইউটিউব
ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয় করার যত উপায় রয়েছে তার মধ্যে ট্রেন্ডিং মিডিয়া বলা যায় ইউটিউবকে। অনেকেই হয়তো ইউটিউব থেকে আয়ের কথা জানেন কারণ বাংলাদেশের যত ইউটিউবার আছেন তাদের অধিকাংশই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী, অর্থাৎ ছাত্র।স্টুডেন্ট অনলাইন ইনকামবিশ্বের সর্ববৃহৎ ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে যদি আপনিও স্টুডেন্ট হিসেবে অনলাইন ইনকাম শুরু করতে চান, একটা ব্যাপার খুব ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেবেন, ইউটিউবের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আপনাকে ইউটিউবের শর্ত যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।উপার্জনের জন্য মনোনীত হতে হলে আপনার চ্যানেলে কমপক্ষে ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম এবং ১০০০ জন নিয়মিত গ্রাহক (সাবস্ক্রাইবার) থাকতে হবে। শর্ত পূরণ করতে পারলেই মিলবে উপার্জনের সুযোগ। ইউটিউব থেকে কেমন উপার্জন সম্ভব?সত্যি বলতে, সীমাহীন! আপনার যতো ইচ্ছে ততো উপার্জন করতে পারবেন আপনি ইউটিউব থেকে, যতোদিন ভালো কন্টেন্ট আপলোড করবেন আপনার চ্যানেলে আর মানুষ তা দেখবে। আর ভিডিও যতো দীর্ঘ হবে আর মানুষ যতো দীর্ঘ সময় ধরে আপনার ভিডিও দেখবে,আপনার উপার্জন ও সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে।১ ডলার থেকে শুরু করে উপার্জনের শেষ কোথায় জানা নেই। সুন্দর কন্টেণ্ট আপলোড করে রাখলেন, আর কোনো কাজ নেই, মানুষ দেখলো আর আপনার আয়ও বাড়তে থাকলো।এছাড়াও কিন্তু ইউটিউব থেকে আয় করা যায়। হ্যাঁ, পেইড স্পন্সরশিপ! অর্থাৎ বিভিন্ন কোম্পানির থেকে বিজ্ঞাপন এনে দেবে আপনাকে ইউটিউব আর আপনি সেই কোম্পানির প্রচারণা চালাবেন আপনার কন্টেন্টে, কিন্তু তা করতে আপনার দরকার হবে ন্যূনতম ১০০০০ গ্রাহক। সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগও থাকছে ইউটিউবে।
ফ্লিপপা ডট কম (flippa.com)
অনলাইন ব্যবসায় কেনাবেচার বাজারের কর্তৃত্ব করা ওয়েব সাইট এই ফ্লিপ্পা। বৃহত্তর পরিসরের দর্শক টানে এই সাইট, তাছাড়া আপনার ওয়েব সাইট কিংবা ব্যবসাকে সবার কাছে প্রদর্শিত হবার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।এটা অনেকটা ই-বে’র মতোই নিলামের সাইট, তবে তাদের জন্য যারা ডিজিটাল সম্পত্তি (উদাহরণস্বরূপ: ওয়েবসাইট, অ্যাপস, ডোমেইন) কেনাবেচায় আগ্রহী।আপনি যদি ভালো অ্যাপস বানাতে পারেন, চাইলে তা অনলাইনে বিক্রিও করতে পারেন। কিংবা এধরনের কোনো ডিজিটাল পণ্য যদি কিনতে চান, যা দ্বারা ইতোমধ্যেই অর্থ উপার্জন হচ্ছে, তাহলেও আপনার জায়গা ওই ফ্লিপপাতেই।এখানে আপনাকে ওই ই-বের মতোই বিড করতে হবে। আপনার বিড জিতে গেছে মানে অর্থ উপার্জন ইতোমধ্যেই চলমান আছে এমন কোনো ডিজিটাল পণ্য আপনার হয়ে গেলো। সেখান থেকে আপনার উপার্জন চলমান রাখতে পারছেন।তাছাড়া, একই সাথে, আপনার যদি এমন কোনো পণ্য থেকে থাকে, তা আপনি এখানে বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
অ্যামাজন
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বই বিক্রির মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো প্রতিষ্ঠানটির, কিন্তু অ্যামাজন এখন আপনার মাথায় আসতে পারে কিংবা আপনার কাজে লাগতে পারে এমন সব কিছুই বিক্রি করছে।আপনার প্রিয় খেলনা কেনার জায়গা নয় শুধু এটা, আপনি তো এখানে টাকাও কামাতে পারছেন। অ্যাামাজনের সাথে ছাত্রদের অনলাইনে টাকা আয় করার জন্য রয়েছে বিশেষ তিনটি উপায়।
i. অ্যামাজন মেকানিক্যাল টার্ক
অ্যামাজনের এই প্ল্যাটফর্মটা মূলত আপওয়ার্কের মতোই যেখানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো আউটসোর্সের জন্য কাজ দিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে বিশেষ করে শুধু মাত্র সেই কাজগুলোই দেওয়া হয়, যেগুলো আসলে কোনো বিশেষায়িত কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে করা সম্ভবপর না হয়।এই যেমন ধরুন, অডিও ইডিটিং, অডিও ট্রান্সক্রাইবিং, অডিও থেকে অনুবাদ কিংবা কোনো ভিডিও থেকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ, ওয়েব পেইজের টেস্টিং, রিভিউ লেখার কাজসহ ইত্যাদি ইত্যাদি অন্য অনেক আরো পরিষেবাসমূহ।আপনি এখানে দেয়া এসব কাজগুলোর মধ্যে যেকোনো কাজ নিয়ে ঘণ্টায় চাইলেই ২০ ডলার থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত কামাই করে নিতে পারবেন। তারা সত্যিকার অর্থেই কাজের বিনিময়ে টাকা দিয়ে থাকে। নিঃসন্দেহে স্টুডেন্ট অবস্থায় অনলাইন ইনকাম করার সেরা একটি উপায়।
ii. অ্যামাজন কিন্ডেল পাবলিশিং
আপনার মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া আছে? ই-বুক বানিয়ে ফেলুন। পাবলিশ করে দিন অ্যামাজনে আর শুরু করে দিন উপার্জন। যখনই আপনি অ্যামাজনে কোনো ই-বুক প্রকাশ করবেন, অ্যামাজন টাকা কামাচ্ছে, সাথে ইনকাম করছেন আপনিও। শুধু বিক্রিটা হইতে হবে আর কি, ঠিকঠাক।নিজেই লিখতে পারেন বই। এজন্য আপনাকে কিন্তু প্রতিষ্ঠিত কোনো লেখক হইতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার আপনার কোনো প্রকাশনা সংস্থার কোনো প্রকার সাহায্যেরও দরকার পড়ছে না, সবকিছু করতে পারছেন আপনি নিজেই। আর দারুণ ব্যাপার হলো, এটা সম্পূর্ণভাবে ফ্রি। সাইন আপ করুন, ই-বুক আপলোড দিন, উপার্জন শুরু করুন। অ্যামাজনই অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক সব দিক থেকে আপনার হয়ে নজর রাখবে। আপলোড দেওয়ার পর পড়াশোনায় মনোযোগ দিতেপারেন। তাছাড়া যেটা অনেকেই জানেনা, অ্যামাজন কিন্ডেল পাবলিশিং এ আপনি প্রকাশ করতে পারছেন পেপারব্যাক ডিজাইনও। আয়ের অন্যতম বিশেষ একটি উৎস এই পেপারব্যাক ডিজাইন।আপনি চাইলে এ ব্যাপারে জানতে ইন্টারনেটে, ইউটিউবেও খানিকটা ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন। তবে আপনি এ সম্পর্কে এক্সপার্টদের সান্নিধ্য পেতে চাইলে আপনাকে হয়তো কিছু টাকা পয়সা ব্যয় করে কোর্সে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে।কিছু কিছু মানুষ তো ১০০০০ মার্কিন ডলারের বেশিও আয় করে থাকে অ্যামাজনে। অবশ্যই এটা আপনার বিবেচনাধীন রাখার মতোই একটা মার্কেট, যদি আপনার অনলাইনে আয় করার আগ্রহ থাকে আর কি!
iii. অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস প্রোগ্রাম
স্টুডেন্টদের জন্য অনলাইন প্যাসিভ ইনকাম এর জন্য জনপ্রিয় এবং সহজ উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় এটি। আপনাকে যা করতে হবে, শুধুমাত্র অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম এ সাইন আপ করতে হবে, সম্পূর্ণভাবে ফ্রি অর্থাৎ এজন্য আপনাকে কোনো পয়সা কড়ি গুনতে হবেনা।এরপর যা করতে হবে, অ্যামাজনের বিশাল অনলাইন গুদাম থেকে আপনার ইচ্ছেমতো যেকোনো পণ্য আপনি বেছে নিতে পারেন এবং আপনার ওয়েব সাইটে প্রচারণার জন্য বেছে নিতে পারেন। সেই সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতেও অ্যামাজনের দেয়া লিঙ্ক ব্যবহার করে প্রচারণা চালিয়ে স্টুডেন্ট অনলাইন উপার্জন শুরু করতে পারেন।আপনার দেয়া লিঙ্ক থেকে কেউ কোনো পণ্য কিনলে অ্যামাজন আপনাকে দেবে ওই পণ্যের দামের ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। আর ওই পণ্য কেউ ক্রয়ের ৬০ দিনের মধ্যে অ্যামাজন আপনার টাকা আপনাকে দিয়ে দিবে। আপনি চাইলে অ্যামাজন গিফট কার্ড দিয়ে অ্যামাজন থেকেই কিছু কিনে সেই টাকা উশুল করতে পারবেন, আবার চাইলে অ্যামাজন থেকে ব্যাংক ট্রান্সফার, পেপ্যাল কিংবা পেয়োনিয়ারের মাধ্যমেও পেমেন্ট নেওয়া যাবে।
0 মন্তব্যসমূহ