বর্তমানে অনলাইন-ভিত্তিক কাজের চাহিদা ব্যাপক।এক্ষেত্রে আপনি যদি বিবিধ ধরণের সফ্টওয়্যার ব্যবহারে পারদর্শী হন এবং সাথে টাইপিং স্পিডও দুর্দান্ত হয়, তবে চাকরি আপনার হাতের নাগালে।যদিও এমন অনেকেই আছেন যারা বাড়িতে বসে বিনা কোনো অর্থ ব্যয়ে রোজগার করতে চান, কিন্তু কীভাবে করবেন সেই উপায় সম্পর্কে অবগত নন।আপনিও যদি তাদেরই একজন হয়ে থাকেন, তবে এই প্রতিবেদন আপনার জন্যই!কেননা আজ আমরা ঘরে বসে টাইপিং বা হ্যান্ডরাইটিং করার মাধ্যমে অনলাইনে অর্থোপার্জনের কয়েকটি পন্থা সম্পর্কে আলোচনা করবো।আপনি ফুল-টাইম অথবা পার্ট-টাইম যেমনই চাকরি সন্ধানী হয়ে থাকুন না কেন, ইন্টারনেটে প্রচুর ‘জব ভ্যাকেন্সি’ উপলব্ধ পেয়ে যাবেন।তবে কাজের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করবে উপার্জনের পরিমাণ।তাই নিচে দেওয়া ‘ক্যারিয়ার অপশন’ গুলি বিবেচনা করে নিজের জন্য উপযুক্ত একটিকে বেছে নিয়ে নিজের ডিজিটাল কর্মজীবন শুরু করতে পারেন।চলুন তাহলে নিচে আমরা টাইপিং করে অর্থ উপার্জনের ১০ টি উপায় গুলোর বিষয়ে জেনে নেই digital Bangla 360 এর মাধ্যমে।
১. ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং:
টাইপ করে অনলাইনে অর্থোপার্জনের অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হল ফ্রিল্যান্স রাইটিং। কার্যত, ফ্রিল্যান্সার রাইটাররা রিসার্চ পেপার এবং ম্যাগাজিন আর্টিকেল লেখার জন্য ব্লগ পোস্ট বা ওয়েব কনটেন্ট তৈরি করে উপার্জন করে থাকে।আপনি টেকনোলজি, ফিন্যান্স, ভ্রমণ এবং লাইফস্টাইল ইত্যাদি বিষয় ভিত্তিক প্রচুর ফ্রিল্যান্স রাইটিংয়ের চাকরি খুঁজে পাবেন Upwork, Fiverr -এর মতো সাইটে। তবে হ্যাঁ আপনার লেখার হাত ভালো এবং শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হতে হবে। এই দুটি গুন যদি আপনার মধ্যে থাকে তবে অবিলম্বে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং হিসাবে অর্থ উপার্জন শুরু করতে পারেন।
২. ট্রান্সক্রিপশন (Transcription):
ট্রান্সক্রিপশনের কাজ করার জন্য আপনার মধ্যে ধৈর্য থাকা খুব জরুরি। একই সাথে মনোযোগ সহকারে শোনার কাজও অন্তর্ভুক্ত এই পেশায়।কেননা একজন ট্রান্সক্রিপশনিস্ট বা প্রতিলিপিবিদ হিসাবে আপনাকে – সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা ইত্যাদির অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং শুনে সেটিকে লিখিত রূপে নথিভুক্ত করতে হবে। তাই এই কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের খুব মনোযোগী শ্রোতা হওয়া আবশ্যক।পাশাপাশি বিশদ বিবরণ মনে রাখতে হবে এবং হাই-স্পিডে টাইপ করতে হবে। প্রসঙ্গত আপনি একজন মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশনবিদ হিসাবেও কাজে নিযুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে মেডিকেল রিপোর্টের অডিও রেকর্ডিং শুনে এবং তা খাতায় কপি বা প্রতিলিপি করতে হবে। আবার আইনজীবীদের অধীনে কাজ করে আদালতের শুনানি রিপোর্ট প্রতিলিপি করার কাজ করতে পারেন।
৩. প্রুফরিডিং (Proofreading):
প্রুফরিডিং নিয়ে যদি আপনি পড়াশোনা করে থাকেন বা একটু হলেও জ্ঞান থাকে এবং পাশাপাশি ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী থাকেন, তবে বিবিধ ধরণের ডকুমেন্ট প্রুফরিড করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এই কাজে – বানান, বিরাম চিহ্ন, ব্যাকরণ, বাক্য গঠন সহ অন্যান্য ত্রুটি সনাক্ত করার জন্য পাঠ্য পর্যালোচনা করতে হবে। আর প্রয়োজনে ভুল সংশোধন করতে এবং লেখাটি আরো ভালো কিভাবে করা যায় সেই পরামর্শও দিতে হতে পারে আপনাকে।
৪. এ এইডিটিং (Editing):
আপনার যদি এডিটর বা সম্পাদক হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে বা কনটেন্ট লেখার দক্ষতা থাকে তবে এই কাজ আপনার জন্য উপযুক্ত! এডিটিং কাজের সাথে – পাঠ্য পর্যালোচনা এবং ডকুমেন্টের টেক্সট স্টাইল ও টোন উন্নত করা জড়িত। একই সাথে, লেখার শৈলী এবং বিষয়বস্তুর সাথে লেখকের লেখার সামঞ্জস্যতা আছে কিনা তাও পরীক্ষা করতে হবে।উদাহরণস্বরূপ – একজন ক্লায়েন্ট তার বই প্রকাশের আগে এডিটরের সাহায্য নিতে পারে। আবার পত্র-পত্রিকা কোম্পানিগুলিরও এডিটরের প্রয়োজন পরে।
৫. কপিরাইটিং (Copy Typing):
কপি টাইপিংয়ের কাজে, কোম্পানি দ্বারা প্রেরিত সোর্সরের থেকে পেপার বা ডিজিটাল ফর্ম্যাটে ডকুমেন্ট কপি বা অনুলিপি করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি যত বেশি প্রজেক্টের উপর কাজ করবেন তত বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।উদাহরণস্বরূপ – আপনাকে রিপোর্ট এবং ম্যানুস্ক্রিপ্ট বা পাণ্ডুলিপি দেখে স্প্রেডশীটে ডেটা প্রতিলিপি করতে বলা হতে পারে কপি টাইপিংয়ের কাজে।
৬. ডেটা এন্ট্রি (Data Entry):
ডেটা এন্ট্রি হল টাইপ করে অনলাইনে অর্থোপার্জনের সবচেয়ে সহজ উপায়গুলির মধ্যে একটি।ডাটা এন্ট্রি হল একপ্রকারের ক্লারিক্যাল জব, যেখানে কম্পিউটার এবং ডেটা প্রসেসিং প্রোগ্রাম ব্যবহার করে কোনো লিখিত তথ্যকে ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে এন্ট্রি করা হয়ে থাকে। এই চাকরি আপনি রিমোর্ট মোডে অর্থাৎ ঘরে বসেই করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, সাথে একটি ল্যাপটপ বা পিসি এবং স্টেবল ইন্টারনেট কানেকশন থাকা আবশ্যক।একই সাথে হাই-টাইপিং স্পিডে মাইক্রোসফ্ট এমএস অফিসে কাজ করার পারদর্শীতাও থাকতে হবে। টাইপিস্ট, ট্রান্সক্রাইবার, কোডার, ডাটা প্রসেসর এবং ওয়ার্ড প্রসেসর – ডেটা এন্ট্রি কাজের আওতায় পড়ে। আপনি – Guru, Freelancer, Axion Data Entry Services, বা Data Plus সাইটগুলির মাধ্যমে ডেটা-এন্ট্রি কাজে নিযুক্ত হতে পারেন।
৭. রিজিউম রাইটিং (Resume Writing):
বর্তমান সময়ে CV বা রিজিউম ছাড়া চাকরির জন্য আবেদন করা যায় না।তাই অনেক চাকরিপ্রার্থী নিজেস্ব একটি ‘প্রফেশনাল’ রিজিউম তৈরি করার জন্য অর্থ ব্যয় করতেও পিছপা হয় না। এক্ষেত্রে আপনি যদি এডিটিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে জানেন, তবে রিজিউম রাইটিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এর জন্য, আপনাকে একটি ক্লায়েন্টের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সহ ব্যক্তিগত তথ্য তুলে ধরে ডিজিটাল ফরম্যাট একটি CV তৈরি করতে হবে।Upwork, Fiverr, Freelancer ইত্যাদি ওয়েবসাইটে আপনি লাভজনক স্যালারির সাথে রিজিউম রাইটিং চাকরি খুঁজে পেতে পারেন।
৮. ট্রান্সলেটর (Translator):
আপনি কি একাধিক আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে বা লিখতে দক্ষ? তাহলে আপনি ট্রান্সলেশনের কাজ করতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনাকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় নথি অনুবাদ করতে হবে। আর পরিবর্তে আপনাকে প্রজেক্ট প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কিধরনের ডকুমেন্ট অনুবাদ করতে হতে পারে?উত্তর হল ‘ট্রান্সলেটর’ বা অনুবাদক হিসাবে আপনাকে – আর্টিকেল, বই, ডকুমেন্ট, এমনকি অডিও ক্লিপকেও এক ভাষার থেকে অপর ভাষায় অত্যন্ত নির্ভুলতার সাথে অনুবাদ করতে হতে পারে।
৯. ভার্চুয়াল অ্যাডসিস্টেন্ট (Virtual Assistant):
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট বা সংক্ষেপে VA হিসাবে আপনার কাজ হবে, বিভিন্ন ব্যবসায়িক কোম্পানির হয়ে অনলাইন মোডে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন ও সম্পন্ন করতে সহায়তা করা।যেমন – ক্লায়েন্টের হয়ে মিটিং শিডিউল ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা, প্রজেক্ট বা প্রেজেন্টেশন বানানো, ফোন কল রিসিভ, ওয়েবসাইট পরিচালনা, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা এবং ক্লায়েন্টদের চিঠি লিখে প্রত্যুত্তর দেওয়ার মতো কাজ করতে হবে আপনাকে।যদিও ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তা উপর নির্ভর করবে আপনার কাজের প্রক্রিয়া ও করণীয়তা। প্রসঙ্গত ব্যক্তিগত সহায়ক হওয়ার জন্য আপনার মধ্যে – ভাল কমিউনিকেশন স্কিল, মাইক্রোসফ্ট অফিসে পারদর্শিতা এবং যথাযথ টাইম মেনেজমেন্ট স্কিলের মতো গুণাবলী থাকা আবশ্যক।
১০. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট:
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট পেশার অধীনে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর এবং কমিউনিটি ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতে হবে। এই পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের – Facebook, LinkedIn, Google Plus -এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি পরিচালনা করতে হবে। পরিচালনা বিষয়টিকে একটি ব্যাখ্যা করে বলি তাহলে।আপনাকে ক্লায়েন্টের হয়ে তার সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে প্রত্যহ কনটেন্ট আপলোড, অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক রাখা এবং গ্রাহকদের রিপ্লাই দিতে হবে রাখতে হবে। তাই আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হওয়া দরকার এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকাও প্রয়োজন।
0 মন্তব্যসমূহ