করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়।করলা তেতো হলেও অনেকের প্রিয়। করলা রুচিবর্ধক সবজি। ভাজি, ভর্তা, ব্যাঞ্জনে করলার অনেক কদর। চিংড়ি সহযোগে ভাজি, ডালের সঙ্গে রান্না কিংবা মুচমুচে ভাজা-রান্না যেভাবেই হোক করলা স্বাদের। গরম ভাতে আলু-করলা ভাজি খাবারকে আনন্দদায়ক করে তোলে।স্বাস্থ্যের জন্য এই সবজির উপকারী গুণও কম নয়। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত করলা রাখুন। করলার ঔষধি গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই দূরে পালাবে।
করলার পুষ্টিমান ও কেন নিয়মিত করলা খাবেন
গরমে স্বস্তি দেয় করলা; সঙ্গে শরীর সুস্থ রাখবে। প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় ২৮ কিলোক্যালরি, ৯২ দশমিক ২ গ্রাম জলীয় অংশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ৫ গ্রাম আমিষ, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা ও ৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে।
১. শ্বাসরোগ দূর করে করলা :
করলার রসে আছে অনেক গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজমপ্রক্রিয়ায় গতি বাড়ায়। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
২. তারুণ্য ধরে রাখে করলা :
করলা উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর তেতো রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন—এমন রোগীর উত্তম পথ্য করলা। করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরে স্বস্তি দেয়। মাথাব্যথারও উপশম করে করলা। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। স্ক্যাভিজের মতো রক্তরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
৩. হজমে স্বস্তি আনে করলা :
করলার বড় গুণ হচ্ছে এটি হজমের জন্য উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা আছে। পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা দূর করতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা :
করলায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তের চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।
৫. রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় করলা :
রলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। কোনো ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়তে সাহায্য করে।
৬. সুগার নিয়ন্ত্রণে করলা :
করলা অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোতে সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।
৭. ক্যানসার প্রতিরোধী করলা :
করলায় আছে যথেষ্ট লৌহ, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এন্টি অক্সিডেন্ট-ভিটামিন এ এবং সি বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এছাড়া করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন।
৮. হার্ট অ্যাটাক রোধ করে করলা :
করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল। এতে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালিতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা।
৯. খাবারে রুচি আনে করলা :
খাবারে অরুচি দেখা দিলে, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে ফলের রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
১০. ম্যালেরিয়া রোগীর পথ্য করলা :
ম্যালেরিয়ায় করলা পাতার রস খেলে খুব উপকার মেলে। এছাড়া ম্যালেরিয়ার রোগীকে দিনে তিনটে করলার পাতা ও সাড়ে তিনটি আস্ত গোলমরিচ এক সঙ্গে থেঁতো করে নিয়ম করে ৭ দিন খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। করলার পাতার রস খেলে জ্বর সেরে যায়। শরীর থেকে কৃমি দূর করতেও করলা কাজ করে।
১১. বাতের ব্যাথা নিরাময় করলা :
দেহ থেকে বাতব্যাথা তাড়াতে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে।
১২. করলার ঔষধি গুণ :
শরীর কামড়ানি, জল পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমিভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছে বা করলার পাতার রস উপকারী। এক চা চামচ করলা পাতর রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
করলার অপকারিতা :
তিতা করলা খেলে উপকারের কথা শুনেছেন বহু । কিন্তু তার অপকারের কথা কি জানেন ।
১। গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায় ।। গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যধিক পরিমাণে তিতা করলা খেলে মাসিকের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং গর্ভনিরোধক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।খিচুনিতে আক্রান্ত হতে পারে এবং এইভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায় ।।
২। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তিতা করলা খুবই উপকারী এবং উচ্চ রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আপনার নিয়মিত ঔষধের সাথে তিতা করলা গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমনভাবে আপনার শর্করা কমাবে যে আপনি কোমায় চলে যতে পারেন ।তাই একটি করলার চার ভাগের এক ভাগ জুস করে খাবেন।
৩। অনিয়মিত হার্ট বিট কারণ হতে পারে তিতা করলা আমাদের হৃদয়ের জন্য উপকারজনক কারণ এটি ধমনীতে ক্লোজিং প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যাইহোক ২০১০ সালের একটি গবেষণায় “দ্য অ্যানালস অফ সৌদি মেডিসিন” প্রকাশিত হয় ।এই তথ্য অনুযায়ী একটি ২২ বছর বয়সী পুরুষ একটি অনিয়মিত হৃদস্পন্দন উপসর্গ বিকাশ পাওয়া যায় পরে তিনি আধা কাপ তিতা করলার রস পান করেন । তাই অল্প বয়সী কেঊ যেন তিতা করলা না খায়
৪। শিশুরা খেলে শিশু পেটে ব্যথা, বমি ও পেট ফাপা রোগে আক্রান্ত হতে পারে । শিশুদের জন্য বিষ ক্রিয়া করে ।
৫। হিপগ্লিসেমিক কোমা হতে পারে , আমাদের দেহে অত্যন্ত কম রক্তের শর্করার মাত্রা দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি ধরনের কোমা তৈরি করে এবং অনিয়মিত হৃদপিন্ডের জন্ম দেয়।
৬। লিভার ইনফ্লেমেশন হতে পারে। আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খরচ কম। যাইহোক, গবেষণায় দেখা যায় যে, তিতা করলা বেশী খেলে লিভার এনজাইমকে উন্নত করে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
সব খাবারের একটি খারাপ দিক আছে। এ হচ্ছে প্রকৃতির ঋনাত্বক ও ধনাত্বক বা আকষর্ন বা বিকর্ষন ক্রিয়া তাই জানা তাকলে আপনার জন্য সুবিধা হবে।
0 মন্তব্যসমূহ