প্রাচীনকাল থেকে শরীরের নানাবিধ রোগের চিকিৎসায় রসুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানের উন্নত মেডিক্যাল সাইন্স নিত্যনতুন ওষুধ আবিষ্কার করলেও রসুনের কার্যকারিতার সামনে সবই ফিকে হতে বাধ্য।শক্তিশালী এই মশলা দিয়ে প্রায় সব ধরণের জটিল ও সাধারণ রোগ দমন করা সম্ভব। পড়ে ফেলুন এই আর্টিকেলটি আর জেনে নিন রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও কিভাবে খেলে ভালো হয় সে সম্পর্কে।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
১. অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে
রসুন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। এটি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে ফেলে। রসুনের এই গুণ ভালো কাজ করে যদি আপনি প্রতিদিন সকালে নাশতার আগে খালি পেটে রসুন খান।
২. হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
রসুন কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের জন্য ডাক্তাররা রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই মশলা জাতীয় খাদ্য উপাদানটি রক্তের সুগারও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩. পরিপাকতন্ত্র ঠিক রাখে
রসুন পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর করে, যকৃত ও মূত্রাশয়ের কার্যক্রম ঠিক রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ক্ষুধামন্দা দূর করে। অনেক সময় স্ট্রেসের কারণে গ্যাস্ট্রিক দেখা দেয়। খালি পেটে রসুন খেলে স্নায়ুবিক চাপ কমে যায় এবং অ্যাসিডিটি হয় না।
৪. ডিটক্সিফাই করে
দেহকে ডিটক্সিফাই করতে রসুনের জুড়ি নেই। এটি কৃমি, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, হাই ফিভার, ডায়বেটিস, ক্যান্সারের মতো রোগের জীবাণু দেহ থেকে বের করে দেয়।
৫. শ্বাসতন্ত্রের আরোগ্য দেয়
শ্বাসতন্ত্রের সকল ধরণের রোগ সারানোর ক্ষমতা রসুনের আছে। যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগ নির্মূল করতে নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত।
৬. ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করে
শুধু কাঁচা রসুন বা কাঁচা রসুনের টনিক ঠান্ডাজনিত সমস্যা ও জ্বর নিরাময় করে।
৭. শিরা-উপশিরা বাধাহীন রাখে
দেহের শিরা-উপশিরায় রক্ত জমাট বাঁধলে অথেরোস্ক্লেরোসিস নামক একটি রোগ হয়। রসুন এই জমাট বাঁধাটা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটি শিরা-উপশিরায় কোন দূষিত বস্তু থাকতে দেয় না।
৮. গেঁটে বাত নিরাময় করে
যারা দীর্ঘদিন ধরে গেঁটে বাতের সমস্যায় ভুগছেন, ওষুধ খেয়েও ফল পাচ্ছেন না, তারা আজ থেকেই নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন ২ কোয়া করে খেলে বাত অনেকটাই সেরে যাবে।
৯. ফোঁড়া, পুঁজ, ও কাটাছেঁড়া সারায়
শরীরে যেকোন পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ায় রসুনের রস লাগালে আরাম পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে রসুনের রস লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে আসলে ধুয়ে ফেলুন। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে রক্ত পরিষ্কারের জন্য। দাদ, খোসপাঁচড়ার মত রোগেও এভাবে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। কাঠ বা বাঁশের ছোট টুকরা চামড়ায় বিঁধে গেলে তা আগে সাবধানে বের করে নিন। এরপর ঐ জায়গায় রসুনের কোয়া কেটে লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখুন। অল্প কয়েকদিনে ঘা সেরে যাবে।
১০. দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে
রসুনের নির্যাস মাউথ ওয়াশ হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত রসুনের নির্যাস দিয়ে কুলি করলে মাড়িতে ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার বন্ধ হয় এবং দাঁত ব্যথা সেরে যায়।
১১. ব্রণ সারায়
ব্রণ ও ব্রণের দাগ সারাতে রসুনের রস দারুণ কাজ করে। শরীরে আঁচিল হলেও রসুনের রস কাজে দেয়। ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ ও অন্যান্য দাগছোপও সারায় রসুন।
১২. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
রসুন শরীরকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি জোগায়। কোলন, রেক্টাল, গলব্লাডার, প্রোস্টেট, এবং ব্রেস্টের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এই মশলা। এছাড়াও রসুন ঈস্ট ইনফেকশন দূর করে।
১৩. হাড় সুস্থ রাখে
অস্টিওপরোসিস ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় করে রসুন। এছাড়াও রসুনের পুষ্টি উপাদান হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে৷ আবার মেনোপজের কারণে হওয়া হাড়ের সমস্যাও দূর করে রসুন।
১৪. ফোলা বা গোটা সারায়
শরীরে মাঝে মাঝে এমন কিছু ফোলা বা গোটা দেখা যায় যা বাড়ে না, কমে না, আবার মিশেও যায় না। এর জন্য দুই কোয়া রসুন হালকা করে ভেজে খেতে হবে কিছুদিন। অন্যভাবেও রসুন খেতে পারেন ফোলা কমানোর জন্য – সকালে খালি পেটে ৬ কোয়া এবং লাঞ্চ ও ডিনারের পরে ২ কোয়া করে রসুন কাঁচা খেতে হবে।
১৫. মস্তিষ্কের সেল ড্যামেজ দমন করে
মস্তিষ্কের সেল ড্যামেজ দমন করে রসুন। ডিমেনশিয়া ও আলজেইমার্সের মতো রোগ সেল ড্যামেজের কারণে হয়। রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রেইনের সেল ড্যামেজ এবং এজিং কমায়।
0 মন্তব্যসমূহ