সব ফলের মধ্যে আঙ্গুর ফল একটু অভিজাত বলেই গণ্য হয়ে থাকে। তাই, দামে খুব একটা সহজলভ্য নয়। তবে হ্যাঁ, এই ফলটি দামের দিক দিয়ে যেমন চওড়া ঠিক তেমনি স্বাদ ও পুষ্টি গুণাগুণের দিক থেকেও অন্যান্য সকল ফলের থেকে এগিয়ে। আর তাইতো চিকিৎসকরা এটিকে “পাওয়ার ফুড” বলে থাকে। শরীরের বেশ কিছু পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই আঙ্গুর ফলকে কিছু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মনে করা হয়।
আঙ্গুর খাওয়ার উপকারিতা
স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি খনিজ ও ভিটামিন সমূহ। এগুলো আমাদের শরীরে বিশেষ কার্য সম্পন্ন করে থাকে। এতে সাধারণত ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-৬, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।এবার আসুন জেনে নেই আঙ্গুর এর উপকারিতা সম্পর্কে –
১. যৌন জীবনে ভূমিকা রাখে আঙ্গুরঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত আঙ্গুর খেলে রসালো যৌন জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে এই ফল যৌনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। মূলত যদি আপনি আপনার এই সম্পর্ককে ভালো রাখতে চান তাহলে রোজ একটু একটু করে আঙ্গুর খান। তাহলে, আপনার জীবন হবে রসালো এবং সুখময়।
২. মাথা ব্যথার সমস্যা নিরাময়েঃ এতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে আরামবোধ করাতে সক্ষম। তাই, যদি হঠাৎ করে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তাহলে সে সময় আঙ্গুর খেলে মাথাব্যথা নিমেষে উধাও হয়ে যায়। আর এটা পরীক্ষা করে প্রমাণিত।
৩. চোখের সুস্থতায়ঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, চোখ ভালো রাখতে এই ফল অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যাদের বয়সের কারণে চোখের সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য আঙ্গুর খুবই উপকারী।
৪. স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ বর্তমান সময়ে মহিলাদের সবচেয়ে কঠিন রোগের মধ্যে একটি হলো ‘স্তন ক্যান্সার’। এর খুব ভালো কোনো ঔষধ নেই। কিন্তু জানলে অবাক হবেন আরেকটি গবেষণায় এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে, আঙ্গুরের উপাদানগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম। বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এটি অধিক কার্যকরী। তাই যাদের এমন সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণ হলেও এই ফল খাওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।
৫. কিডনির সুরক্ষায়ঃ আঙ্গুর ফলে উপাদানগুলো ক্ষতিকারক ইউরিক এসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখে, যারফলে কিডনির যেকোনো রোগ ব্যাধির বিরুদ্ধে খুব সহজেই শরীরে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়। তাই, চিকিৎসকরা কিডনি সুরক্ষায় এই ফলটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৬. ত্বকের যত্নেঃ এতে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট মূলত ত্বকের সুরক্ষায় অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সেইসাথে এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বককে করে তোলে ভেতর থেকে উজ্বল সেইসাথে ব্রণের সমস্যা দূর করে। যারা ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে চান এবং বিভিন্ন সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে চান তারা নিয়মিত খাবারের তালিকা আঙ্গুরকে রাখুন। কারণ, আঙ্গুর ফল নিয়মিত খেলে অবশ্যই আপনার ত্বক সুন্দর এবং মোলায়েম হবে।
৭. স্মৃতিশক্তি প্রখরতায়ঃ আমাদের মাঝে আমরা এমন অনেকেই রয়েছি যারা ছোট ছোট বিষয়গুলো খুব দ্রুত ভুলে যাই। আবার কোনো ঘটনা হঠাৎ করেই স্মৃতি থেকে খুব সহজেই মুছে যায়। আসলে এটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়, এটা এক ধরনের রোগ। তাই, এই বিষয়টা হেলাফেলা করার মতো কিছু নয়। নিজের সুস্থতার জন্য, নিজের ভালোর জন্য, নিজের স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করতে, আজ থেকেই আঙ্গুর খাওয়া শুরু করুন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এটি প্রমাণিত হয়েছে, আঙ্গুর ভুলে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করে।
৮. রক্ত সঞ্চালনেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা রয়েছে, যারা সাধারণত রক্ত সঞ্চালনে ভারসাম্যহীনতায় ভোগেন, বিশেষ করে তাদের জন্য বাছাইকৃত আদর্শ ফল হলো আঙ্গুর। কারণ, আঙ্গুরে থাকা ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস শরীরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে থাকে।
৯. বদহজমের সমস্যা নিরাময়েঃ আঙ্গুরে ঔষধি গুনাগুন অনেক। এটি যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে বদহজম জনিত সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। তাছাড়াও এটি প্রমাণিত যে অগ্নিমন্থা দূর করতে আঙ্গুর ফল বেশ কার্যকরী।
১০. চুলের যত্নেঃ খুশকির সমস্যা আমাদের মাঝে অনেকেরই দেখা দেয়। সেইসাথে চুলের আগা ফেটে গিয়ে রুক্ষ হয়ে যাওয়া এবং ধূসর রঙের হয়ে যাওয়া যেন একটি সাধারণ ব্যপার। অনেক সময় মাথার সব চুল ঝরে পড়ে টাক হয়ে যায়। এমন সমস্যা থেকে বাঁচতে কতকিছুই না করা হয়ে থাকে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি যে, যারা নিয়মিত আঙ্গুর খায় তাদের মাথার চুল অত্যান্ত ঘন হয়, সেইসাথে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়, পাশাপাশি খুশকির সমস্যা চিরকালের মতো দূরীভূত হয়।
এছাড়াও আঙ্গুর খেলে হাড় হয় ভেতর থেকে শক্ত ও মজবুত, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, অ্যাজমা সহ বিভিন্ন প্রকার রোগ খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়, পাশাপাশি যেকোনো কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
0 মন্তব্যসমূহ