বাদামের জগতে এক রাজকীয় স্থানে রয়েছে পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতা সমৃদ্ধ এক বাদাম, আর তা হলো কাজু বাদাম। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো cashew nuts। গুণাগুণের দিক থেকে কাজু বাদামের কোনও বিকল্প নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। স্বাস্থ্যকর সব খাবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরের নানা রকম সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তাররা একে “প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট” বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।প্রতিদিন কেও যদি নিয়ম করে এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করে তাহলে তা শরীরের পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সাথে পাওয়া যায় আরও অনেক উপাকার একাধিক গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। আজ তবে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং সেই সাথে এটি খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতাঃ
১. অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমেঃ
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এতো পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যে তা দেহের রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করে দেয়। সেই সাথে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। তাই অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমতে এই কাজু বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি দূরে করেঃ
কাজু বাদামের ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে, সেই সাথে টিউমারও যাতে দেখা না দেয় বা আক্রমণ না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখে। এখানে এই মারণ ব্যাধিকে সাপ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে বেজির সাথে তুলনা করা যেতে পারে উদাহরন হিসেবে। কাজু বাদামে প্রম্যান্থো-সায়ানিডিন নামে একটি উপাদান থাকে, যার ফলে এই বিশেষ কাজ হয়।
৩. হাড়কে মজবুত করেঃ
কাজু বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। যার ফলে এই বাদামটি নিয়মিত খেলে তা হাড়ের উপর প্রভাব ফেলে ফলে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পরবর্তিতে বৃদ্ধ হওয়ার পরও তা অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমিয়ে দেয়। কেননা কাজু বাদামে আছে ভিটামিন-কে, যা হাড়ের জন্য অনেক উপকারি উপাদান।
৪. ডায়াবেটিস মতো ব্যাধি রোধ করেঃ
ডায়াবেটিসের রোগি যদি নিয়মিত রুটিন করে এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়া শুরু করে, তাহলে তা দেহের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন আনতে শুরু করে যে, এতে করে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। যার ফলে রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে অনেক কমে যায় বিভিন্ন গবেষণায় এটা দেখা গিয়েছে। তাই পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে যে যাদের পরিবারে এই মরণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।
৫.বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণের ঝুকি কমায়ঃ
কাজু বাদামে থাকে জিঙ্ক, যার কাজ হলো ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করা। তাই নিয়মিত কাজু খেলে আপনি এই ধরনের ইনফেকশনের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।
৬. হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
কাজু বাদামের প্রধান উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখার সাথে সাথে নানারকম হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ কাজ করে থাকে।
৭. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কপার। আর এই উপাদানটি হল সেই খনিজ, যা চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর সাথে সাথে চুলের গোড়াকে শক্ত করতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের ভিতরের কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যা চুলের রংকে কালো রাখতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই এটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ। তবে কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন তা জানা দরকার। এর জন্য প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং কখন খাবেন?যদি আপনি ডায়েট এর জন্য খেয়ে থাকেন তাহলে সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবারের আগের সময়, যেমন- ১১.০০–১.০০ টার মধ্যে একমুঠ বাদাম খেতে পারেন। আবার বিকালেও যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন নাস্তা হিসাবে অন্য খাবার না খেয়ে একমুঠ কাজু বাদাম ৪.০০–৫.৩০ টার মধ্যেও খেতে পারেন। এতে ক্ষুধাও চলে যাবে সেই সাথে আপনার ডায়েটও ঠিক থাকবে।ডায়েট ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে খেয়ে থাকেন তাহলে ১০–১২ টি বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেয়ে নিবেন।
0 মন্তব্যসমূহ