কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হয়, তা বেশিরভাগ মানুষের কাছেই বেশ অজানা একটা বিষয়, কিন্তু এটা সম্পূর্ণভাবেই বোধগম্য একটা ব্যাপার। যেকোনো ভাবেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ব্যাপারটা কিন্তু একজন নতুন ব্যক্তির জন্যে সত্যিই কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে, যারা ফ্রিল্যান্সিংকে নিজের প্রধান পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছেন, তাদের কাছে জিনিসটা জটিল মনে হতেই পারে। তবে এটাও সত্যি যে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ লাখ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করছেন।তাই নতুনদের কাছেও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করাটা মোটেও অসম্ভব কাজ নয়।আর, আপনি যদি ফুল-টাইম ফ্রিল্যান্স কেরিয়ার শুরু করার কথা ভেবে থাকেন কিংবা আপনি যদি এক্সট্রা ইনকামের জন্যে একটা পার্ট-টাইম ফ্রিল্যান্স জব শুরু করতে চাইছেন,তাহলে আপনি সঠিক পেশারই খোঁজ করছেন। কারণ, আপনার ভবিষ্যতকে আর্থিক ও পেশাগতভাবে সুরক্ষিত করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সত্যিকারেরই একটা দুর্দান্ত উপায়। আর, আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি, নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ৬ টি টিপস সম্পর্কেই। (how to make money online in bangladesh)
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ৬ টি টিপস:
একজন ফ্রিল্যান্সারের পেশাগত জীবনে অগুণিত সুবিধা রয়েছে।ধরুন, আপনি যে ধরণের কাজ করবেন ও যার সাথে কাজ করবেন- সেগুলো বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আপনার রয়েছে। সেইসাথে, আপনি কোনো প্রোজেক্টে কতটা সময় দেবেন ও কোথা থেকে কাজ করবেন- সেটা সম্পূর্ণই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। অনেকের মতেই, ফ্রিল্যান্সিং হল সত্যিই আনন্দদায়ক আয়ের একটা উপায়, যা স্বাধীন জীবনযাত্রা বজায় রেখে বেঁচে থাকার দারুণ সুযোগ করে দিতে পারে। সৌভাগ্যবশত, যে কেউ, এমনকি আপনিও একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ শুরু করতে পারেন। আর, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে ও ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতে, এই আর্টিকেলে আমরা আলচনা করলাম সেরা ৬ টি ফ্রিল্যান্সিং টিপস সম্পর্কে। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার স্বাধীন মানসিকতা থাকাটা একান্তই জরুরি, কারণ এখানে আপনাকেই আপনার আয়ের উপায় খুঁজে বের করে, ক্লায়েন্ট ধরে রোজগারের রাস্তা করে নিতে হয়।
১. আপনিই আপনার বস মনোভাবটা বজায় রাখুন:
ফ্রিল্যান্সার হতে গেলে শুধুমাত্র দক্ষতা থাকলেই চলবে না, বরং একটা সঠিক মানসিকতাও থাকতে হবে। যতই আপনার ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্ট থাকুক না কেন, তারা যতই আপনাকে কাজ বা অর্থ প্রদান করুক না কেন, তাদের কেউই আপনার বস নয়। উল্টে, আপনিই হলেন আপনার কাজের বস। নিজেই নিজের বস হওয়াটা অবশ্যই দারুণ ব্যাপার, কিন্তু অভ্যাস না থাকলে, এই ব্যাপারটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। যারা প্রথম থেকেই ৯টা-৫টা চাকরিতে অভ্যস্ত, তাদের কাছে নিজেই নিজের বস মানসিকতা গড়ে তোলাটা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হতে পারে। তাই, নিজেকে যত তাড়াতাড়ি এই স্বাধীন মানসিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন, ততই নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার যাত্রাটা মসৃণ হবে।
আরো পড়ুন: শর্ট লিঙ্ক করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ইনকাম করতে চাইলে এখানে ক্লিক করে দেখুন
২. নিজের দক্ষতা, ট্যালেন্ট ও আগ্রহগুলো জানুন:
আমাদের সকলেরই কম-বেশি ট্যালেন্ট বা দক্ষতা থাকেই, এমনকি আপনারও অবশ্যই রয়েছে। সাধারণত, আপনার এমন কোনো দক্ষতা বা ট্যালেন্ট রয়েছে, যাতে আপনি সত্যিই ভালো, আপনি তা উপভোগ করেন এমনকি সেটার মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করার প্রবল সম্ভাবনাও দেখেন। সেক্ষেত্রে, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে, আপনি যে ধরণের কাজ করতে চান, তা হয়তো আপনি ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন। আর, যদি নাও বা ঠিক করে থাকেন, তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি নানান ধরণেরই কাজ করতে পারেন। যার মধ্যে কয়েকটির কথা আমরা নিচে উল্লেখ করলাম –
*রাইটিং
*প্রোগ্রামিং
*বুককিপিং
*টিউটোরিং
*কনসাল্টিং
*প্রুফরিডিং
*ট্রান্সক্রিপটিং
*গ্রাফিক ডিজাইনিং
*ভার্চুয়াল এসসিসটিং
*সফটওয়্যার ডেভেলপিং
*মেডিকেল কোডিং, বিলিং
*সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজিং
*ফটোগ্রাফি ও আরও অন্যান্য
এই কাজগুলো বাদ দিলেও, এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং কাজের সুযোগ সারা ইন্টারনেট মাধ্যম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে, যেই কাজগুলো করার জন্যে কোনো বিশেষ ডিগ্রিরও প্রয়োজন পড়ে না।
৩. অনুসন্ধান করুন:
ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার আগেই, যে ফিল্ডে কাজের কথা ভাবছেন, সেই ফিল্ডের মার্কেট ডিমান্ড ও অর্থ উপার্জনের পরিমাণের উপর যথেষ্ট অনুসন্ধান চালান। যদি, এখনও আপনি কাজের ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকেন, তাহলে অবশ্যই চাপের কিছু নেই।
* আপনার পছন্দমতো কাজ খুঁজে পাওয়া সহজ নাকি কঠিন ?
*অন্যান্য ফ্রিল্যান্সাররা কি ধরণের কাজ থেকে আয় করছে ?
*সেই কাজের লাইনে কি ফ্রিল্যান্সারদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে ?
ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরণ, কাজের মান, মার্কেট চাহিদা ও প্রতিযোগিতার মতো বিষয়গুলো ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের পরিমাণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।এছাড়াও, আপনার অভিজ্ঞতা ও কোন ওয়েবসাইটে আপনার ক্লায়েন্টরা আপনাকে নিয়োগ করছে, তার উপরেও আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে থাকে। তবে, আপনার আগ্রহের কাজের ফিল্ডে ফ্রিল্যান্সারদের গড় আয় জানার একটা ভালো উপায় হল ইন্টারনেটে এই ধরনের কাজের আনুমানিক মাসিক স্যালারিগুলো অনুসন্ধান করা। আপনার চেনা-জানা ফ্রিল্যান্সারদেরও এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
৪. নিজের দক্ষতার বাড়ান:
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস কিন্তু আসলেই প্রতিযোগিতামূলক। তাই, আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে, আপনার দক্ষতা বা ট্যালেন্ট আপনাকে যথেষ্ট টাকা এনে দিতে পারে কিনা, তাহলে চাপ না নিয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতি নজর দিন। আপনি দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে কোনো অনলাইন কোর্স কিংবা নতুন দক্ষতাও শিখতে পারেন। এমনকি, এমন বিভিন্ন ধরণের কোর্স রয়েছে, যা থেকে বিভিন্ন ধরণের ফ্রিল্যান্স কাজ শেখা যায়। এক্ষেত্রে, কিছু বিনামূল্য কোর্স রয়েছে আবার বেশ কিছু বেশ ব্যয়বহুল কোর্সও রয়েছে। কোনো বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেতে বিনামূল্য কোর্সগুলো সহায়তা করলেও, পেশাদারভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যে পেইড কোর্সগুলোই ভালো। কোনো অনলাইন কোর্সে অর্থ ব্যয় করার আগে, আপনি কোর্সটি নিয়ে লোকেরা কি বলছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করুন। আপনি যে কোর্স বা ওয়েবসাইট থেকে এই কোর্সগুলো কিনছেন, তার রিফান্ড পলিসি আছে কিনা, তা অবশ্যই দেখে নেবেন। প্রথমে নিশ্চিত হন যে, যে আপনার নির্বাচিত কোর্সটি আসলেই আপনার সময় বা অর্থ অপচয় করবে না তো ?
*নিয়মিত ব্লগ পড়ুন
*পডকাস্টগুলো শুনুন
*ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন
*অনলাইনে বিনামূল্যের কোর্সে যোগ দিন
*কাজের বিষয়ে একজন পরামর্শদাতা খুঁজুন ও তাঁর থেকে শিখুন
*দক্ষতা কখনওই রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়।
তাই, আপনাকে ধৈর্য ধরে সময়ের সাথে সাথে ধারাবাকিভাবে অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিয়ে, তা অর্জন করতে হবে।
৫. ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো খুঁজুন:
আপনি কোথায় ক্লায়েন্ট ও কাজ খুঁজে পাবেন, তা আপনি কোন ধরণের ফ্রিল্যান্সিং কাজ করবেন তার উপর নির্ভর করে। বর্তমানে, এমন অনেক অনলাইন কাজ সন্ধানের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে; যেখানে আপনি ফ্রিল্যান্স কাজ সহজেই খুঁজে পেতে পারেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলো মোটেও একরকমের হয় না। ফাইভার কিংবা আপওয়ার্কের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো কম বেতনের কাজ দিয়ে থাকে, আবার অন্যান্য চাকরির সন্ধানের সাইটগুলো তাদের থেকে আরও বেশি বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেয়। বিভিন্ন চাকরি খোঁজার সাইটগুলো সারা বিশ্বের মানুষের জন্য যেকোনো ধরণের চাকরির প্রস্তাব দিলেও, এমন অনেক সাইট আছে, যা কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ধরণের ফ্রিল্যান্সিং কাজের সন্ধান দিয়ে থাকে।
*ক্লায়েন্ট পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা কেমন রয়েছে ?
*প্ল্যাটফর্মগুলোর জব লিস্টিংগুলো ভালো করে দেখে নিন
*তাদের পেমেন্ট পলিসিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান করুন
*প্ল্যাটফর্মগুলো আপনার ও আপনার দক্ষতা প্রদর্শনের জন্যে আদর্শ কিনা
এছাড়াও, আপনি ফেইসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিজের প্রোফাইলের নেটওয়ার্ক তৈরী করে সেখান থেকে কাজ খুঁজতে পারেন। এমন অনেক জব সার্চ সাইট আছে, যেখানে নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং জব খুঁজে দেওয়ার জন্যে বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রোফাইল তৈরী করার অনুমতি দেয়। এমনকি, আপনি আপনার ব্যক্তিগত কানেক্শনের সাহায্যেও ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো খুঁজতে পারেন।
৬. স্ক্যামের থেকে দূরে থাকুন:
দুর্ভাগ্যবশত, স্ক্যাম বা প্রতারণার বিষয়টি সব জায়গার মতো ফ্রিল্যান্সিং-এও রয়েছে। আপনি আপনার ফ্রিল্যান্স কর্মজীবন ভালোভাবে শুরু করতে চাইলে নির্ভরযোগ্য সাইট বা প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত হন। সবথেকে ভালো হয়, যদি আপনি কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। তবে, সম্ভব না হলে, পার ডে বা পার প্রোজেক্ট পেমেন্টের মাধ্যমে নতুন ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করুন। অনেক এমন ওয়েবসাইট বা জব পোর্টাল থাকে, যেগুলো নিজেই জালি হয়ে থাকে কিংবা সেখানকার জব পোস্টিংগুলোও জালি হতে পারে। তবে, সবসময় মনে রাখবেন যে, কোনো প্রজেক্ট বা চাকরি পাওয়ার জন্যেই আপনাকে কোনো থার্ড পার্টিকে কোনোভাবেই টাকা দিতে হয় না। যেসব কোম্পানি, ক্লায়েন্ট বা জব পোর্র্টাল এই ধরণের ডিম্যান্ড করে, তারা অবশ্যই ফ্রড বা প্রতারক। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে এই ধরণের স্ক্যামে ফেঁসে যাওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে, বিচক্ষণতার সাথে ও কাজের অভিজ্ঞতা থেকে ধীরে-ধীরে আপনিও এই ধরণের স্ক্যামগুলো জানতে ও বুঝতে শিখে যাবেন।
0 মন্তব্যসমূহ