যাদের ওজন বেশি তাদের হার্টের অবস্থা স্বাভাবিক লোকদের তুলনায় খারাপ থাকে। শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেললে রক্তচাপ কমে আসবে। ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন কমানো রক্তচাপ কমাতে বেশি কার্যকর।বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। 'জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮'-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। তবে চাইলে ওষুধ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মায়ো ক্লিনিকের এক প্রতিবেদনে ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু নিয়ম দেয়া হয়েছে। চলুন দেখে নেই।
ওজন কমানো
গবেষণায় দেখা যায়, যাদের ওজন বেশি তাদের হার্টের অবস্থা স্বাভাবিক লোকদের তুলনায় খারাপ থাকে। শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেললে রক্তচাপ কমে আসবে। ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন কমানো রক্তচাপ কমাতে বেশি কার্যকর।
নিয়মিত হাঁটা এবং ব্যায়াম
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর কার্যকর উপায় হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম করা। এটা আমাদের হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী করে এবং রক্ত পাম্প করতে আরও বেশি দক্ষ করে তোলে। ফলে আমাদের ধমনীতে চাপ কমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে চাইলে একজন মানুষের প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (যেমন- হাঁটা) এবং ৭৫ মিনিট বা তার বেশি জোরালো ব্যায়াম (যেমন- দৌড়ানো) করা উচিত। অনেকে মনে করে, জিমে গিয়ে ব্যায়াম করতে হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আপনি চাইলে বাসায় বসে জিমের মতো ব্যায়াম করে রক্তচাপ কমাতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। পটাশিয়াম আমাদের শরীরকে সোডিয়াম থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এবং আমাদের রক্তনালিতে চাপ কমায়। বিভিন্ন পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে চেরি টম্যাটো, আলু, মিষ্টি আলু, দই, অ্যাভোকাডো, কমলা, তরমুজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া ও বেশি তরতাজা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
হতাশা ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, হতাশা হচ্ছে রক্তচাপ বাড়ার প্রধান কারণ। মানসিক চাপের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের। অনিদ্রা ও খিটখিটে মেজাজেরও সম্পর্ক রয়েছে মানসিক চাপের সঙ্গে। এসবের ফলে কমে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। বাড়ে সংক্রমণের আশঙ্কা। তাই হতাশা ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
মদ্যপানকে না বলুন
গবেষণা অনুসারে রক্তচাপ বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অ্যালকোহল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৬ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপের জন্য অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলযুক্ত খাবারকে দায়ী করা হয়েছে। এখন অনেকেই বলে থাকে যে সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল শরীরের ক্ষতি করে না। এটা আসলে ভুল ধারণা। তাই রক্তচাপ কমাতে অ্যালকোহল এবং অ্যালকোহলযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
কম লবণ
লবণ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। কারণ এতে আয়োডিন ও সোডিয়াম থাকে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা শারীরিক সমস্যার জন্য বেশি লবণ গ্রহণ দায়ী। তবে এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের আবার দ্বিমতও আছে। যাই হোক, আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে আপনাকে কাঁচা লবণ খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে বা সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।
ডার্ক চকলেট ও কোকো
গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্ভিদ যৌগ রক্তনালিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। কোকো পাউডার ও ডার্ক চকলেটে রয়েছে উদ্ভিদ যৌগ। অন্যদিকে ফ্ল্যাভোনয়েড-সমৃদ্ধ কোকো রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি করতে সক্ষম। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ডার্ক চকলেট আপনার হার্টের উন্নতি করার বিপরীতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই পরিমাণ (মাঝে মাঝে) মতো ডার্ক চকলেট বা কোকো খান।
ধূমপান নয়
যারা ধূমপান করেন তারাও জানেন, এটা রক্তচাপ বাড়িয়ে হার্টের ক্ষতি করে। ধূমপান পরিহার করতে পারলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই এটা একেবারে পরিহার করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ