আমাদের দেশে ভেড়া পালন বেশ লাভজনক। ভেড়া ঘাস খেতে খুব পছন্দ করে এবং দলগতভাবে ঘুরে বেড়ায়। তাই এটি পালন করা খুব সহজ। এদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। এটি ১৫ মাসে ২ বার বাচ্চা দেয়। তাই ভেড়া পালন শুরু করলে কয়েক বছরের মধ্যে খামারের আকার বড় হয়ে উঠে। অন্যদিকে এটি পালন করে লাভবান হওয়া যায়।ভেড়া শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। তবে কিছু দানাদার খাদ্য সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। ভেড়া পশম ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। আমাদের দেশে ভেড়ার তেমন কোনো ভালো জাত নেই। বাংলাদেশের ভেড়া মোটা পশম উৎপাদন করে। তাই এরা পশমের জন্য জনপ্রিয় নয়। আমাদের দেশে ভেড়া মাংসের জন্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে।ভেড়া খাবারের জন্য সারাদিন মাঠে ঘুরে বেড়ায়। এদের বাসস্থান প্রয়োজন হয়। বাসস্থানের প্রয়োজন বিশেষ করে রাতে ভেড়ার বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। তাছাড়া বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও বাস স্থানের দরকার। ঝড় ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য ও বেশি উৎপাদনক্ষম ভেড়ার দুগ্ধ দোহন করার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন। অন্যদিকে গর্ভবতী, প্রসূতি ও বাচ্চা ভেড়ার পরিচর্যার জন্যও বাসস্থান জরুরি।ভেড়া পালনের জন্য তিন ধরনের ঘর ব্যবহার করা হয়। যেমন,- উন্মুক্ত, আধা উন্মুক্ত ও আবদ্ধ ঘর। আবহাওয়া ও জলবায়ুর কথা চিন্তা করে রাতে আশ্রয়ের জন্য ভেড়ার ঘর তৈরি করা হয়। ভেড়ার ঘরের মেঝে ভূমি সমতলে বা মাচার তৈরি হয়ে থাকে।যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় সেখানে এ ধরনের ঘর উপযোগী। একটি নির্দিষ্ট জায়গার চারিদিকে বেড়া দিয়ে উন্মুক্ত ঘর তৈরি করা হয়। এধরনের ঘরে কোনো ছাদ থাকে না। সারাদিন বাইরে খাওয়ার পর রাতে ভেড়ার পাল এখানে আশ্রয় নেয়। এখানে মেঝেতে খড় ব্যবহার করা হয়।উন্মুক্ত ঘরের নির্দিষ্ট স্থানের এক কোনে কিছু জায়গা যখন ছাদসহ তৈরি করা হয় তখন তাকে আধা উন্মুক্ত ঘর বলে। যেসব এলাকায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয় সেখানে আধা,– উন্মুক্ত ঘর ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভেড়া পালার উপকারিতা
১. ভেড়া পালনের উপকারিতা কি?
• ভেড়া থেকে একই সাথে মাংস, দুধ ও পশম পাওয়া যায়।
২. ভেড়া পালনের সুবিধা কি?
• ভেড়ার জন্য আলাদা উন্নত বাসস্থানের প্রয়োজন হয় না। গরু ও ছাগলের মত একই সাথে পালন করা যায়।ভেড়া নিজেদের খাদ্য নিজেরাই যোগাড় করতে পারে। ভেড়া পালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম।ভেড়ার সংখ্যা অতি তাড়াতাড়ি বাড়ে, ভেড়ার মলমূত্র জমির সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়, জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে, জলাশয়ের ঘাস চরে খেতে পারে এবং ভেড়ার রোগ-ব্যাধি কম হয়।
৩. ভেড়ার অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য কি?
• ভেড়া দলবদ্ধ হয়ে বসবাস ও বিচরণ করে, চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কম, চড়ানোর জন্য বাড়তি কর্মীর প্রয়োজন নেই, অপেক্ষাকৃত কম খেয়ে অধিক মাংস ও পশম উৎপাদন করে।
৪. ভেড়া সব ধরণের খাবার খেতে পারে কি?
• ভেড়া তার নরম মুখ দিয়ে অতি ছোট ছোট ঘাস লতাপাতা খেয়ে কৃষি জমির আগাছা কমাতে পারে।
৫. দুধ ও মাংসের পাশাপাশি ভেড়া কত পরিমাণ পশম উৎপাদন করতে পারে?
• প্রতি বছরে প্রতিটি ভেড়া ৩.৫-৫.৫ কেজি পশম উৎপাদন করতে পারে।
৬. ভেড়া পালনে সাধারণ সাময়িক সমস্যা কি হতে পারে?
• ভেড়ার শরীরে অনেক সময় যে ময়লা লাগে তা পরিষ্কার করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়।
৭. গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে ভেড়ার সংখ্যা কি হারে বেড়েছে?
• ১৯৮৩-৮৪ সালে ভেড়া ছিল ৬,৬৭,১৮৯টি ও ১৯৯৬ সালে ছিল ১৬,৮০,০১১টি। গত এক যুগে বছরে প্রায় ১৫% আর বর্তমানে প্রতি বছরে ভেড়া বেড়েছে প্রায় ১২.৭৫%।
৮. বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ভেড়া পাওয়া যায়?
• উত্তর-পশ্চিম বরেন্দ্র অঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের যমুনা ও ব্রহ্মপূত্র অববাহিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়া পাওয়া যায়।
৯. আমাদের দেশে ভেড়া পালনের কেমন সম্ভাবনা আছে?
• ভেড়া পালন খুবই সম্ভাবনাময় কারণ ভেড়া পালনে অতিরিক্ত তেমন কোন খরচ নেই। সামান্য যত্নে অতি তাড়াতাড়ি ভেড়া বংশ বিস্তার করে এবং দিনের বেলায় ফসলের খালি ক্ষেতে, রাস্তার ধারে ও ফলের বাগানে ছেড়ে বা বেধে পালন করা যায়।
১০. সারা দিনে ভেড়াকে কি ধরণের খাবার দিতে হয়?
• চাউলের সামান্য কুঁড়া, চাল-ভাজা বা ভাতের মাড় ভেড়াকে খাওয়ানো যেতে পারে।
১১. একজন খামারী বা কৃষক গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে কয়টি ভেড়া পালতে পারে?
• একজন খামারী ৩-৬টি ভেড়া পালন করতে পারে।
১২. ভেড়া পালন সহজসাধ্য করার জন্য বাংলাদেশের কোথায় কোথায় গবেষণার কাজ করা হয়?
• ঢাকার অদূরে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের সন্নিকটে বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভেড়া উন্নয়ণের গবেষণা কাজ চলছে।
১৩. বর্তমান বিশ্বে আনুমানিক কত সংখ্যক ভেড়া আছে?
• সারা বিশ্বে ১০৬ কোটিরও বেশি ভেড়া আছে।
১৪. বিশ্বে ভেড়া পালন মূলত কিসের উপর নির্ভরশীল?
• আঞ্চলিক আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং স্বল্প খরচে ও সহজ-প্রাপ্য খাদ্যসাম্গ্রীর উপর ভেড়া পালন নির্ভরশীল।
১৫. কোন কোন অবস্থা বা পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়?
• সম্পূর্ণ ছেড়ে খাওয়ানো, সম্পূর্ণ আবদ্ধ অথবা মিশ্র পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা যেতে পারে।
১৬. উপরিউক্ত পদ্ধতি ছাড়া আর কোন কোন পদ্ধতিতে সাধারণত ভেড়া পালন করা হয়?
• চারণ-ভূমিভিত্তিক এবং ভূমিহীন উৎপাদন ব্যবস্থায় ভেড়া পালন করা হয়।
১৭. পৃথিবীর কোন কোন এলাকায় বা দেশে চারণ-ভূমিতে ভেড়া পালন করা হয়?
• এ অবস্থায় খাদ্যর মূল উৎস্ চারণ-ভুমি। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ উন্নত প্রায় সব দেশেই চারণ-ভূমিতে ভেড়া পলন করা হয়।
১৮. বিশ্বের মোট ভেড়া উৎপাদনের কত অংশ চারণ-ভূমিতে পালিত হয়?
• প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভেড়া চারণ-ভূমিতে পালিত হয়।
১৯. বাংলাদেশে ভেড়া উৎপাদন আরও সম্ভাবনাময় করার ক্ষেত্রে কোন দেশকে অনুসরণ করা হচ্ছে?
• কৃষি-উপজাত খাদ্য সামগ্রী যথা খড়, ভূষি ও কৃষি খামারের আগাছা সঠিকভাবে ব্যবহার করে পরিবেশ-বান্ধব ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গ-রাজ্যসমূহের অনুসরণে ভেড়া পালন করা হচ্ছে।
২০. বিশ্বের কোন কোন দেশে ভূমিহীন অবস্থায় ভেড়া পালন করা হয়?
• পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় সম্পূর্ণ আবদ্ধ রেখে ভূমিহীন অবস্থায ভেড়া পালন করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ