দুধ আমাদের সকলের পরিচিত। দুধের উপকারিতা যেমন আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। আমরা অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করি আবার অনেকের কাছে এটি অপছন্দ একটি খাবার। দুধের মধ্যে আছে অনেক পুষ্টিগুন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।আমরা অনেকেই জানতে চাই যে দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কিন্তু সঠিক তথ্য খুজে পাই না। আজকে আমরা জানবো দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো। সর্ব প্রথম জানবো দুধের উপকারিতা কি কি বা দুধ খেলে শরীরের কি কি উপকার হয়? (দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা)
দুধের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত
হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতেঃ
দুধে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যাসলিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীর হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেলে আমাদের হাড় মজবুদ ও শক্তিশালী হবে। এজন্য শিশুদের প্রতিদিন দুধ খাওয়াতে ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবারই দুধ খাওয়া উচিত কারন দুধের উপকারিতা অনেক।
ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখেঃ
ফিটনেস ঠিক রাখতে আমরা কতকিছুই না করে থাকি। অনেকে জিম করে, কেই জগিং করে। আপনি কি জানেন শরীর সুস্থ রাখার একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে দুখ খুবই উপকারি। নিয়মিত দুধ খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং মন সতেজ থাকবে। তাই আমাদের প্রতিদিন একগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।
শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করেঃ
শরীরে শক্তি যোগাতে দুধের উপকারিতা অনেক। আপনি হয়তো জানেন না দুধ খেলে আপনার শরীলে শক্তি সঞ্চয় হয় এবং আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিন কত কাজেই না ব্যস্ত থাকি। আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পরে। আপনি যদি নিয়মিত দুধ খেতে পারেন তাহলে এই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। গরুর দুধে আছে ভিটামিন, প্রাটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাস সহ নানান পুষ্টিগুন।
আরো পড়ুন: সকল স্বাস্থ্যকর আর্টিকেলগুলো একসাথে পেতে এখনই এখানে ক্লিক করুন
মানসিক চাপ দূর করতেঃ
দুধে থাকা পুষ্টিগুন আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। আমরা যখন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরি বা দুশ্চিন্তা করি তখন আমরা অনেক ক্লান্ত এবং ভেঙ্গে পরি। আমরা যদি প্রতিদিন দুধ খাই তাহলে এই ক্লান্তিগুলো দূর হয়ে যাবে ফলে মন এবং শরীর তাজা থাকবে। তাই আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়া অভ্যাস করা উচিত।
শরীরের ওজন হ্রাস করেঃ
প্রতিদিন দুধ খেলে শরীরের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ
দুধের উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি দুধে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি তে ভরপুর। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি প্রতিদিন দুধ খায় তাহলে এই সমস্যা কমবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে।
পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমায়ঃ
পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমাতে দুধের উপকারিতা অনেক। দুধে থাকা ক্যাসলিয়াম ও ভিটিমিন ডি পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দুর করে কিন্তু লো ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া উচিত।
রাতে ভাল ঘুম হয়ঃ
অনেকেরই রাতে ঘুম হয় না। রাতে ঘুম ভাল করতে গরম দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন দেখবেন ঘুম ভাল হচ্ছে।
দাঁত ভাল রাখেঃ
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে। অনেকেরই আবার ছোট থেকেই ক্ষত শুরু হয়ে যা। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হারের পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁত ভাল রাখে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবঃ
আমরা তো জানি যে দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম তাই নিয়মিত দুধ খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়ে যাবে নিমিশেই।
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতেঃ
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখাতে নিয়মিত দুধ খান।
স্ট্রেস দূর করতেঃ
রিসার্সে জানা যায় দুধ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা স্ট্রেসে ভুগছেন তারা প্রতিদিন অনতত এক গ্লাস করে দুধ পান করুন।
ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখেঃ
আপনি না জানলে জেনে রাখুন ত্বক ভালো রাখতে দুধের উপকারিতা আছে। নিয়মিত লো ফ্যাট দুধ খেলে নাকি ত্বক কম ফাটে, এর কারণ হল কম ফ্যাট যুক্ত দুধে থাকে ট্রাই-গ্লিসারাইড। নিয়মিত ত্বকে দুধ লাগালে ত্বকের থেকে অতিরিক্ত তেল কমে যায়।
চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলেঃ
দুধ চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের নানা প্যাক দুধ দিয়ে বানান।
পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়ঃ
পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। দুধ যেহেতু পানীয় খাবার তাই এটি খুব সহজেই পাকস্থলী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যাদের হজমে সমস্যা তারা নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ
দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই দুধ নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দুধের উপকারিতা অধিক। দুধে থাকা ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দুধের পুষ্টিগুন
দুধে যেমন আছে উপকারিতা তেমনি পুষ্টিভরপুর। গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস। বিস্তারিত এখানেএতক্ষন তো জানলেন দুধের উপকারিতা নিয়ে। এখন চলুন জেনে নেই দুধের অপকারিতা বা দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা। আমরা ভাবি যে সকলের জন্য দুধ খাওয়া উপকারি কথাটি ভুল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা কিছু কিছু লোকের জন্য আছে কিছু সাবধানতা।
দুধ খাওয়ার অপকারিতা
১। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনি রোগীদের জন্য কম খাওয়া এবং রাতে দুধ না খাওয়াই উত্তম।
২। যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ (lactase) নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া।
৩। এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অকেনের আবার দুধে এলার্জি আছে বলে জানা যায়।
৪। যারা পাকস্থলীর আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী, তাদেরও দুধ খাওয়া উচিত নয়। এই সকল রোগীদের দুধ খেলে পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।
৫। যাদের পেটে অপারেশান করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া উচিত না যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠছেন তখন দুধ খেতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ