আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। আমরা প্রতিদিন যে সব খাবার গ্রহণ করছি এবং সে সব খাবার থেকে যে পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশ করছে, তার সবগুলো উপাদান শরীরে কাজে লাগার পরেও কিছু কিছু উপাদান বাড়তি থেকে যায়। কিডনিই একমাত্র সেই বাড়তি উপাদানগুলোকে বের করতে পারে। আজ আমরা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে জানব।এনটিভির নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রতিদিনের একটি পর্বে কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে বলেছেন পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনীম।পুষ্টিবিদ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, যখনই দেখা যায় শরীরের বাড়তি উপাদানগুলো বেশি থেকে যাচ্ছে, তার মানে কিডনির ফাংশন প্রপারলি কাজ করছে না। মানে কিডনিতে প্রবলেম হচ্ছে, কার্যক্ষমতা কমে আসছে, সেই উপাদানগুলো আমাদের রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। যেমন পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস; এ ছাড়া রয়েছে সেরাম, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক অ্যাসিড এবং আরও অন্যান্য উপাদান। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত পানি বের হতে না পেরে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। যখনই আমাদের এ সমস্যাগুলো দেখা দেবে, তখনই বুঝতে হবে কিডনিতে সমস্যা হচ্ছে। কিডনির সমস্যা অনেক রকমের হতে পারে। যেমন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, ওয়ান টু ফোর স্টেজ; তার পর স্টেজ ফাইভ। এ ছাড়া অন্যান্য কিডনি রোগ আছে।সামিয়া তাসনীম বলেন, সবার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে, যেহেতু সোডিয়ামের কথা আমরা বলেছি, সেহেতু আমাদের সোডিয়াম ক্লোরাইডের ইনিটেকটা খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেকে লবণের কথা বলে থাকে। হ্যাঁ, লবণ তো অবশ্যই ইনটেক কমিয়ে আনতে হবে এবং পার ডে রিকমেন্ড করা হয় ওয়ান টি স্পুন অথবা ২০০০-২৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত, যেটা আমরা প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের মনে রাখতে হবে, যাঁরা হাই ব্লাড প্রেশারের রোগী আছেন, তাঁদের অবশ্যই ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে রাখতে হবে। যদি ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোল করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে। সে ক্ষেত্রে যে খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে, সেগুলো হলো বাইরের প্রসেস করা খাবার, রেস্টুরেন্টের খাবার এবং ক্যান যে সব স্যুপ অথবা ফিশ আমরা কিনে খেয়ে থাকি, সে ধরনের খাবার, সাথে সস ইত্যাদি, যেগুলোতে সোডিয়াম ক্লোরাইডের ব্যবহার অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে থাকে।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় কি ?
কিডনিতে সমস্যা হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে যা সাধারণ মানুষ খালি চোখে বুঝতে পারবে কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই। আশাকরি এই লক্ষনগুলো ভালোভাবে পড়বেন।
১. ফোলা ভাব দেখা যায়
হাতে , পায়ের গোড়ালি , আবার অনেক সময় চোখের নিচে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। যদি এই ফোলা ভাবটি এক সপ্তাহ অথবা দুই সপ্তাহ স্থায়িত্ব হয় তাহলে কিডনির সমস্যার কারণে এই ফোলা ভাবটি হতে পারে।কেননা কিডনিতে যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন কিডনি শরীর থেকে পানি বের করতে পারে না। এর ফলে শরীরের মধ্যে পানি জমে গিয়ে ওইরকম ফোলা ভাব তৈরি হয়।
২. প্রস্রাবের মধ্যে পরিবর্তন
কিডনিতে সমস্যা হলে প্রস্রাব কমে যেতে পারে আবার অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। এটা কিডনি রোগের অনেক বড় লক্ষণ। এই সমস্যা স্বাভাবিকভাবে রাত্রে বেড়ে যায়। প্রস্রাবে আরো নানান ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন : প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভব হতে পারে। এটাও কিডনি রোগের লক্ষণ।প্রস্রাবের ব্যাগ হওয়া সত্ত্বেও প্রস্রাব না আসা। এটাও কিডনি রোগের একটি লক্ষণ।প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যাওয়া।প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া। এটি অনেক মারাত্মক সমস্যা। এটা কিডনি রোগের অনেক বড় লক্ষণ।
৩. অধিকাংশ সময় শীত অনুভব হওয়া
কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে সব সময় শীত শীত অনুভব হতে পারে। কেননা অনেক সময় কিডনির সমস্যার কারণে জ্বর এসে থাকে। ফলে শীত শীত অনুভব হয় ।
৪. ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
অর্থাৎ কিডনির সমস্যার কারণে ঘুমের মধ্যে সমস্যা হতে পারে। কেননা যখন কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন কিডনি শরীর থেকে পানি বের করতে পারে না ফলে ফুসফুসের মধ্যে পানি জমে যায়।যখন ফুসফুসে পানি জমে যায় তখন শোয়া অবস্থায় পরিপূর্ণভাবে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। এভাবে ঘুমের মধ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
৫. বমি বমি ভাব হতে পারে
কেননা যখন কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন কিডনি রক্ত থেকে বর্জনীয় পদার্থ আলাদা করতে পারে না। ফলে রক্তের মধ্যে বর্জনীয় পদার্থ বেড়ে যায়। এতে করে বমি বমি ভাব অথবা বমির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ