বিজনেস ওয়াল্ডে টিমের নেতৃত্বদানের কাঠামো খুব দ্রুতই পরিবর্তন হচ্ছে। এক স্টাডিতে দেখা গেছে যে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার বেবী বোমার জেনারেশনের বা মোস্ট সিনিয়রগণ অবসরে যাচ্ছেন এবং ২০২০ সালের মধ্যে আমেরিকায় ৫০% ওয়ার্কফোর্সই ইয়ং প্রফেশনাল হিসেবে কাজে যুক্ত হবেন। আমাদের দেশেও বহুজাতিক এবং দেশীয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোও তরুণ নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখতে শুরু করেছেন। আর এই পরিবর্তনের কারণে ইয়ং লিডাররা নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণসব ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে লিডার এবং টিম মেম্বার উভয়েই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন। এই প্রবন্ধটি আসলে সেই সব ইয়ং লিডারদের পথ দেখাবে যারা দ্রুত টিমের শ্রদ্ধা অর্জন করেতে চান; পাশাপাশি তাদেরও কাজে আসবে যারা তরুণ নেতৃত্বের সাথে একই টিমে কাজ করে থাকেন।
যত দ্রুত সম্ভব নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিনঃ
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর এক প্রবন্ধে দেখা গেছে যে, তরুণ নেতৃত্ব কর্মক্ষেত্রে তার কলিগদের কাছে গ্রহণযোগ্যতার দিকে থেকে বেশ কিছু ইউনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। সাফল্য লাভের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার অভাবকেই তরুণ নেতৃত্বের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে। আর এই মনোভাব থেকে টিমের অন্য সকল সদস্যদেরকে বের করে নিয়ে আসতে চাই সবার জন্য একটি মানানসই লক্ষ্য স্থির করা তথা টিমের অন্য সবার সাথে সেই লক্ষ্য শেয়ার করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে টিমের সবাই টিম লিডারকে নিশ্চিত করবেন যে তারা পরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একমত এবং সেটা পূরণের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তরুণ লিডারও তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সমূহ বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন যাতে করে তার টিম আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারে।
সত্যিকার অর্থে টিমের ভালো চাইতে হবেঃ
যদি আপনার টিমকে এই অনুভূতি দেন যে আপনি তাদের জন্য যথেষ্ট কেয়ারিং এবং তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করছেন তাহলে খুব সহজেই তারা আপনাকে সম্মান দিতে শুরু করবে। আবার কারো কেয়ার নেয়ার নেয়া মানে এই নয় যে তাকে সব সময় ইনফ্লুয়েন্স করতে হবে কিংবা টিম মেম্বারদের সব ব্যাক্তিগত অনুরোধ মেনে নিতে হবে। অধিকন্তু আপনি এটা দেখান যে–পুরো টিম তথা টিমের প্রত্যেকের সাফল্যের ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট সচেষ্ট আছেন। এবং এটাও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে কাজের ক্ষেত্রে টিম মেম্বারদের প্রয়োজনীয় সময় ও সাপোর্ট দেন। মনে রাখা দরকার যে শুরুতে আপনি যতটুকু বলবেন, টিমের সদস্যদের কথা তারচেয়ে বেশী সময় নিয়ে শুনবেন।
টিমের সাফল্য মানেই আপনার সাফল্যঃ
যে কোন বিজনেস লিডারের সাফল্য বিচার করার প্রধান মাপকাঠি হলো তার টিমের সাফল্য কতটুকু সেটা বিবেচনায় নেয়া। সর্বদা টিমকে হাইলাইটস করে প্রত্যেক কাজ সুচারু রুপে সম্পাদনের চেষ্টা করে যেতে হবে। আর টিমকে সাফল্যের কৃতিত্ব দেয়াটা হচ্ছে একজন ইয়ং লিডারের শ্রদ্ধা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। আর যখন লোকজন ফিল করবে যে আপনি তাদের প্রফেশনাল উন্নতির জন্য কাজ করেন, তখন তারা নিজে থেকে আরো ওপেন হবে, নিজেদের ব্যাপারে ফিডব্যাক চাইবে; আর গাইডলাইন প্রত্যাশা করবে।
সত্যিকার ফিডব্যাক আদান–প্রদান করুনঃ
কোন রকম ভনিতা না করে যেটা সত্যি সেটাই সরাসরি বলে ফেলুন যা আপনার টিম মেম্বারদের প্রফেশনালি বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে। এই স্বচ্ছতা পরবর্তী সময়ে টিমের জন্য মঙ্গল বয়ে আনার পাশাপাশি একক দক্ষতাও প্রভূত উন্নয়ন ঘটাবে।
কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দিনঃ
শুরুতেই আপনি যদি খুঁটিনাটি সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টা করতে যান, তবে টিমের লোকজন খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়তে পারে। এটা আরো বেশী করে চাপ সৃষ্টি করবে যদি কারো পূর্বের ম্যানেজারের সাথেও এমন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে।এর চেয়ে বরং একটি নিদিষ্ট লেভেল পর্যন্ত টিম মেম্বারদের কাজের স্বাধীনতা দিন, তাদের উপর আস্থা রাখুন এবং তাদেরকেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিন। কিছুদিন পর সম্ভব হলে তাদের কাজের মূল্যায়ন করুন এবং দেখুন কে স্বাধীনভাবে কাজ করছে আর কে করছে না। তখন যদি কেউ পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয় তবে তাকে পারফর্মেন্স উন্নতির পরিকল্পনা দিন, সময় দিন, তাকে নিয়মিত মনিটর করুন। এরপরও যদি কারো পারফর্মেন্সের উন্নতি না হয় এবং তিনি উন্নতি করতে না চান তবে তাকে চলে যেতে দিতেই পারেন। মনে রাখবেন, একজন ম্যানেজার কখনো তার টিমের খুঁটিনাটি সবকিছুর নিয়ন্ত্রক নন, বরং তিনি হলেন ফ্যাসিলেটেটর যিনি অন্যদেরকে ক্ষমতায়ন করেন।
নিয়মিত ওয়ান অন ওয়ান সেশনে বসুনঃ
নিয়মিত ওয়ান টু ওয়ান মিটিং নিশ্চিত করবে যে আপনি টিমের সাথে আছেন এবং তাদের সাফল্যের জন্য আপনিও কাজ করতে চান। এতে করে সবাইকে একটা স্পেস দেয়া হয় যাতে করে যেকেউ তার ইচ্ছেমতো কথা বলার কিংবা মতামত দেয়ার সুযোগ পায় এবং লাইন ম্যানেজার থেকে প্রয়োজনীয় ফিডব্যাকও পেয়ে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে , এতে করে টিমের সকল সদস্যদের মধ্যে জবাবদিহীতারও অভ্যাস গড়ে উঠে।
অন্যসব বিজনেস লিডারদের থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিনঃ
এটা খুবই স্বাভাবিক যে আপনার কাছে সব সময় সব ধরনের প্রশ্নের জবাব কিংবা সকল সমস্যার সমাধান জানা নাও থাকতে পারে। তাই আপনার উচিৎ হবে অন্যান্য অভিজ্ঞ লিডারদের সাথে একটি কার্যকরী কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যাতে করে চ্যালেঞ্জিং ম্যানেজেরিয়াল কাজের প্রয়োজনে আপনি তাদের মূল্যবান পরামর্শ নিতে পারেন। সাকসেসফুল বিজনেজ লিডারদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন আপনার লার্নিং কার্ভের গতিকে দ্রুত ত্বরান্বিত করে আপনাকে আরো কার্যকর টিম লিডার হিসেবে পরিণত করবে।
ধৈর্য্য ধরে অনুশীলন করে যানঃ
নিজের এবং টিমের সাফল্যের জন্য অবশ্যই একটু ধৈর্য্যশীল হতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে যে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সব কিছু কিছু বুঝে উঠতে আপনার যেমন একটু সময় লাগবে, তেমনি আপনার মতো একজন ইয়ং লিডারের সাথে মানিয়ে নিতেও আপনার টিমের কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। চাইলে আত্ন-উন্নয়নের জন্যে ‘সেলফ ম্যানেজমেন্ডের’ উপর একটি রুটিন বানিয়ে নিন যাতে করে আপনার নিয়মিত ওয়ান টু ওয়ান মিটিং তথা সকল কাজের একটা প্রতিচ্ছবি পেতে পারেন। আশা করা যায় যে, ঠিক সময়মতো আপনার টিম একজন ইয়ং লিডার হিসেবে আপনাকে যথাযথ সম্মান করতে বাধ্য হবে।
বিনয়ী হোনঃ
ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত এক স্টাডিতে দেখা গেছে যে বিনয়ী লিডাররা হচ্ছেন সবচেয়ে সফল তথা কার্যকরী। বিজনেস ওয়াল্ডের তাকেই নেতৃত্বে বেশী সফল হতে দেখা গেছে যিনি বিনয়ী আর তার নিজস্ব শক্তিমত্ত্বা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন এবং টিমের সদস্যদের কাছ থেকে বিনয়ী দলনেতা সম্পর্কে অধিক পজিটিভ ফিডব্যাক পাওয়া গেছে ঐ স্টাডিতে।বিনয়ী হওয়া মানে অন্যদের সাফল্যে জন্য ভালো কিছু করা, নিজ প্রতিষ্টানের জন্যে ভালো কিছু করা আর কর্মক্ষেত্রে কারো প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া। এতে করে নিজের অভিজ্ঞতা যেমন বাড়বে, ক্যারিয়ারের সাফল্যের মাত্রাও ত্বরান্বিত হবে।
প্রয়োজনে টিমের সদস্য পরিবর্তন করুনঃ
উপরে উল্লেখিত ৯ টি বিষয় যথাযথভাবে প্রয়োগের পরও যদি আপনার টিমের কোন সদস্য আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, কাজে মনোনিবেশ না করে বরং নিজের মতো করে যেনতেনভাবে দিন কাটিয়ে দেয় তবে আপনার উচিৎ হবে উক্ত টিম মেম্বারকে পরিবর্তনের ব্যাবস্থা করা। প্রয়োজনীয় সব প্রচেষ্টা চালানোর পরও যদি কারো মধ্যে পরিবর্তন না আসে, লাইন ম্যানেজারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না জন্মায় তবে মনে রাখা দরকার যে সত্যিকারে লিডাররা কখনো অবাধ্যতা বরদাস্ত করেনা। আর একজন টক্সিক কর্মী শুধুমাত্র যে টিমের জন্যেই ক্ষতিকারক তা নয়, বরং পুরো প্রতিষ্টানের জন্যেই সে ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে ইয়ং লিডারকে অবশ্যই কর্মী পরিবর্তনের জন্য ওপেন হতে হবে তবে কারো প্রতি অবিচার করা চলবে না।
শেষ কথা,
বর্তমান বিশ্বে একজন ইয়ং লিডার হিসেবে কাজ করা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জিং। আর দ্রুত শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য যে কোন কাজের সাফল্যে নিজের চেয়ে টিমকে অধিক কৃতিত্ব দিন। নিয়মিত ওয়ান টু ওয়ান মিটিং চালিয়ে যান এবং সরাসরি ফিডব্যাক দেওয়ার কালচার গড়ে তুলুন যা কর্মীদের দ্রুত উন্নতি করতে সহায়তা করবে। আর সবশেষে নিজের প্রতি আস্থা রেখে কাজ চালিয়ে যান, শিখতে থাকুন আর অভিজ্ঞতা অর্জন করুন; সাফল্য আসবে।
0 মন্তব্যসমূহ