বিষণ্ণতা একটি সাধারণ আবেগ বা অনুভূতি। মানুষের দৈনন্দিন জীবন এবং সম্পর্কে রাগ, কান্না, হাসি, বিষণ্ণতা, ক্লান্তি এসব জড়িয়ে থাকে। এগুলোর মিলেমিশেই এগিয়ে যায় জীবন।তবে প্রতিটি আবেগ অনুভূতির একটি নির্দিষ্ট সময় বা সীমারেখা আছে। সেই সীমারেখা পার করলেই তা গুরুত্বর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘসময় ধরে বিষণ্ণতা একজন মানুষকে ধীরে ধীরে অক্ষমতার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়l
বিষণ্ণতার কারণ
বিষণ্ণতা সাধারণত ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। শারীরিক অবস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত জীবনে নানা কারণে বিষণ্ণতা হতে পারে।
১. পারিবারিক বা কর্মক্ষেত্রে কোন সমস্যায় বিষণ্ণতা হতে পারে।
২. দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, অনিদ্রা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ইত্যাদির কারণে বিষণ্ণতা হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান অনেক সময় বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. মাসিকের সময় এবং সন্তান জন্মদানের পরে প্রায়ই নারী বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন।
বিষণ্ণতা কাটানোর উপায়
বিষণ্ণতা সাধারণত মৃদু, অল্প বা বেশি ধরনের হয়ে থাকে। তবে শারীরিক কার্যকলাপ, জীবনধারা বা খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনসহ কিছু কিছু উপায়ে মৃদু বা অল্প বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।
১.
বিষণ্ণতা জীবন থেকে কাঠামো দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তাই বিষণ্ণতা দূর করতে হলে রুটিনমাফিক জীবনযাপন করা দরকার। প্রতিদিন কোন কাজ কোন সময়ে তার রুটিন তৈরি করাটা বা একটি দৈনিক সময়সূচি সেট করা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।
২.
আপনি যখন হতাশাগ্রস্ত হন, তখন আপনার মনে হতে পারে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। এ ধরনের হতাশা থেকে বের হতে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা অনেক জরুরি। জীবনে লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলে হতাশা দূর হয় অনেকখানি।
৩.
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম এন্ডোরফিন নামক হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যা মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্ককে ইতিবাচক উপায়ে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে উৎসাহিত করে।
৪.
স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। গবেষকদের তথ্যমতে, প্রমাণ রয়েছে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন স্যামন এবং টুনা) এবং ফলিক অ্যাসিড (যেমন পালং শাক এবং অ্যাভোকাডো) বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৫.
বিষণ্ণতা দূর করতে পর্যাপ্ত ঘুমানো অনেক জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্ক ও মনকে শান্ত ও শিথিল রাখে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন।
৬.
সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। নিয়মিত কোন কাজে জড়িত থাকা এবং প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন এমন একটি জীবনধারা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে যা বিষণ্ণতা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
৭.
নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে প্রথমেই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা উচিত। সব সময় ইতিবাচক থাকা মানসিক শক্তির যোগান দেয়।
৮.
নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। হতাশা ঘিরে ধরলে এমন কিছু করার চেষ্টা করুন যা আগে কখনোই করেননি বা যা করতে ভালো লাগে। চিন্তা-ভাবনায় বৈচিত্র্য আনতে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন, আঁকাআঁকি করতে পারেন বা বই পড়তে পারেন।
৯.
অ্যালকোহল এবং অন্যান্য মাদক এড়িয়ে চলুন। অ্যালকোহল বিষণ্ণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যে আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যা করতেও পিছপা হয় না। তাই মদ্যপান ত্যাগ করার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী ওষুধ ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিত।
১০.
প্রকৃতিতে সময় কাটান। প্রকৃতি একজন ব্যক্তির মন ও মেজাজের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্ণতা অনেকখানি কমে আসে।
0 মন্তব্যসমূহ