বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় অংশে পরিণত হচ্ছে। রাইড শেয়ারিং সেক্টরে যেমন কাস্টমার বাড়ছে, ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ড্রাইভার বা রাইডার এর চাহিদা। এমন অবস্থায় একটি মোটরসাইকেল কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে কভারেজযুক্ত এলাকায় খুব সহজে রাইড শেয়ারিং করে আয় করা সম্ভব। অনেকেই এখন রাইড শেয়ারিং থেকে আয় করাকে পছন্দের পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। তবে আমরা এখন এই পোস্টের মাধ্যমে জানবো রাইট শেয়ারিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য ডিজিটাল বাংলা ৩৬০ এর মাধ্যমে। ( digital marketing a to z bangla )
রাইড শেয়ারিং কি?
রাইড শেয়ারিং একটি সরল ধারণা। কোথাও যেতে যানবাহনের প্রয়োজন পড়ে। আবার অনেকে আছেন যারা নিজের গাড়ি বা মোটরবাইক নিয়ে চলাফেরা করেন। ধরুন, আপনি আপনার প্রাইভেট কার নিয়ে ধানমণ্ডি থেকে নিউ মার্কেট যাবেন। এই পথে আরো অনেক মানুষ চলাচল করেন। আপনার প্রাইভেট কারের বাকি সিটগুলো ফাঁকা।এখন আপনি চাইলে সহজেই আরও ৩জন মানুষ আপনার গাড়িতে করে নিউমার্কেট নিয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ আপনার যানবাহন আপনি অন্যদের সাথে শেয়ার করলেন। এতে করে ঐ তিনজন মানুষের যাত্রা আরামদায়ক হলো, আবার তারা আপনাকে কিছু টাকাও দিলো। এটা থেকে আপনার আয় হলো। এভাবেই রাইড শেয়ারিং এর ধারণাটি শুরু হয়।এখন অনেকে নিজের বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি/বাইক নিয়ে ফুল টাইম ভাড়ায় চালিয়ে থাকেন। রাইড শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে গাড়ি ভাড়া করা হয় না। বরং স্মার্টফোন থেকে অ্যাপ এর মাধ্যমে ড্রাইভার হায়ার রিকোয়েস্ট পাঠানো হয় ও রাইডার (অর্থাৎ ড্রাইভার) উক্ত রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলে রাইড শেয়ারিং প্রক্রিয়া শুরু হয়।অর্থাৎ চিরাচরিত গাড়ি ভাড়ার প্রক্রিয়া ও রাইড শেয়ারিং সার্ভিসসমুহের ধারণা অনেকটা একই ধরনের। রাইড শেয়ারিং অ্যাপসমুহের ক্ষেত্রে একমাত্র পার্থক্য হলো এখানে গাড়ি ভাড়া করা হয় স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে। এখানে আলাদা দামাদামির কিছু নেই।
রাইড শেয়ারিং এ কিভাবে কাজ করে?
রাইড শেয়ারিং কি – সেটা তো আমরা জানলাম। এবার চলুন সহজ কয়েকটি ধাপে রাইড শেয়ারিং আসলে কিভাবে কাজ করে সেটি বোঝার চেষ্টা করি।প্রথমত রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে একজন কাস্টমার নিকটস্থ কোনো রাইডারকে রিকোয়েস্ট পাঠানরাইড শেয়ারিং অ্যাপ মূলত এই রিকোয়েস্ট নিকটবর্তী রাইডারের কাছে পৌঁছে দেয়উক্ত রাইডার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলে কাস্টমারকে উল্লেখ করা স্থান থেকে যানবাহনে তোলেনগন্তব্যে পৌছেঁ দেওয়ার পর কাস্টমার ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বা অনলাইন পেমেন্ট করে থাকেনকাস্টমার এবং রাইডার উভয়ের ফোনের জিপিএস সেবার উপর নির্ভর করে অ্যাপগুলো কাজ করেঅর্থাৎ রাইড শেয়ারিংয়ের এই প্রক্রিয়ায় মোট তিনটি চালিকাশক্তি এক হয়ে কাজ করে। প্রথমে আসে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানি। যারা রাইডার ও কাস্টমারের জন্য প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছেন। রাইডার হলেন তিনি যিনি গাড়ি চালিয়ে থাকেন ও কাস্টমার হলেন যাত্রী।প্রতি রাইডের একটি নির্দিষ্ট অংশ পায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস, যার থেকে তাদের ম্যানেজমেন্ট খরচ বাদ দিলে বাকিটা লাভ হিসেবে ধরা যায়। অর্থাৎ আপনি যদি একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপে রাইডার হিসেবে নিবন্ধন করেন তাহলে ঐ অ্যাপ কোম্পানি তাদের সার্ভিস চার্জ হিসেবে আপনার কাছ থেকে কিছু টাকা নেবে।
আরো পড়ুন: প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনকাম করতে চাইলে
এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত দেখুন।
বাংলাদেশে কিছু জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে দেশে বেশ কিছু রাইড শেয়ারিং সার্ভিস রয়েছে। চলুন একনজরে জেনে নেওয়া যাক দেশে বিদ্যমান উল্লেখযোগ্য রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো সম্পর্কে।
পাঠাও – Pathao
২০১৫ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে পাঠাও। বর্তমানে দেশের তিনটি বড় শহর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশজুড়ে ৮০ লাখের অধিক গ্রাহক এবং ৩ লাখের বেশি চালক-ডেলিভারি এজেন্ট রয়েছেন পাঠাও এর সেবায়। রাইড শেয়ারিং ছাড়াও কুরিয়ার সার্ভিস, ফুড ডেলিভারি, ই-কমার্স সার্ভিসসহ অসংখ্য সেবা দিয়ে থাকে পাঠাও।পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার করে মোটরসাইকেল বা কার ভাড়া করা যায়। প্লে স্টোরে থাকা পাঠাও অ্যাপ ডাউনলোড করা থাকতে হবে পাঠাও এর প্যাসেঞ্জার ও ড্রাইভার, উভয়ের ফোনেই।
উবার – Uber
দেশে পা ফেলা প্রথম আন্তর্জাতিক রাইড শেয়ারিং অ্যাপ হলো উবার। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে সেবাটি। বর্তমানে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ কক্সবাজার ও সিলেট শহরে পাওয়া যাচ্ছে উবার এর সেবা। কার, মাইক্রোবাস, মটোরবাইক বা স্কুটার এর জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন একজন উবার প্যাসেঞ্জার। থাকছে সিএনজি চালিত অটোরিকশাও। অ্যাপ ডাউনলোড করে বেশ সহজে অ্যাকাউন্ট খুকে ব্যবহার করা যাবে উবার এর অ্যাপ। এছাড়াও প্রায়সই লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে উবার।
ওভাই – Obhai
“পৌঁছে দেবো” স্লোগানে চালিত ওভাই একটি বাংলাদেশি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস, যা অন্যান্যদের মতই গন্তব্যের দুরত্বের উপর নির্ভর করে কার, মাইক্রোবাস, মটোরবাইক ও সিএনজি ইত্যাদি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস অফার করছে। বর্তমানে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ইত্যাদি শহরে ওভাই এর সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
রাইড শেয়ারিং থেকে আয়
অধিকাংশ রাইড শেয়ারিং সার্ভিস প্রায় একইভাবে কাজ করে। রাইড শেয়ারিং থেকে আয় করতে প্রথম একটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে যথাযথ তথ্য প্রদান করে ড্রাইভার হিসেবে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপর খুব সহজে রাইড শেয়ার করে আয় করা যায়।বোঝার সুবিধার্থে আমরা এখানে কিছু ইতোমধ্যে উল্লিখিত রাইড শেয়ারিং সার্ভিস থেকে আয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবো। তবে আপনার পছন্দনীয় যেকোনো রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই ড্রাইভার হিসেবে অ্যাকাউন্ট খুলে আয় করতে পারবেন।
পাঠাও রাইড শেয়ারিং থেকে আয়
পাঠাও এর সাহায্যে বাইক, কার, এমনকি সাইকেলের মাধ্যমেও আয় করা যাবে। বাইক থাকলে রাইড শেয়ার করে, ফুড ডেলিভারি দিয়ে ও পার্সেল ডেলিভারি করে পাঠাও এর মাধ্যমে আয় করা যাবে। আবার কার থাকলে সেক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আয় সম্ভব। সাইকেলের মাধ্যমে পাঠাও থেকে আয় করতে হলে ফুড বা পার্সেল ডেলিভারি দিতে পারবেন।পাঠাও থেকে আয় করতে অবশ্যই একটি স্মার্টফোন থাকা আবশ্যক। এছাড়াও ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। পাঠাও থেকে কার ও বাইকের মাধ্যমে আয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাইক ও কারের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও যথাযথ ডকুমেন্ট থাকা আবশ্যক। প্যাসেঞ্জার থেকে পাওয়া ভাড়ার ১০% থেকে ১৫% পাঠাও সার্ভিস চার্জ হিসেবে গ্রহণ করে। বাকীটা রাইডারের থাকে।প্লে-স্টোর থেকে “পাঠাও ড্রাইভার” অ্যাপ ডাউনলোড করুন
যথাযথ তথ্য প্রদান করে পাঠাও ড্রাইভার একাউন্টের জন্য সাইন আপ করুনএকাউন্ট সফলভাবে খোলা সম্পন্ন হলে পাঠাও ড্রাইভার অ্যাপের স্ট্যাটাস অনলাইন রাখুনসবশেষে আপনার ফোনের জিপিএস এর কার্যকরিতা নিশ্চিত করুন ও রাইড রিকোয়েস্ট এর অপেক্ষা করুনরাইড রিকোয়েস্ট পেলে তা সম্পন্ন করে ক্যাশ, বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করুন (যেটা প্রযোজ্য)
প্রোগ্রামিং শিখে প্রতিদিন ৫০০০ থেকে ১০০০০ টাকা কিংবা তারও বেশি ইনকাম করতে চাইলে
এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন।
উবার রাইড শেয়ারিং থেকে ইনকাম
পাঠাও এর মত প্রায় একই উপায়ে উবার থেকে রাইড শেয়ারিং করে আয় করা যাবে। উবার থেকে রাইড শেয়ার করে আয় করতে ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি কার্ড, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স টোকেন, ইন্স্যুরেন্স, ইত্যাদি থাকা বাধ্যতামূলক। উবার ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে ভাড়া থেকে প্রায় ২৫% কমিশন গ্রহণ করে উবার। উবার থেকে রাইড শেয়ারিং করে আয় করতেঃপ্রথমে অনলাইনে ড্রাইভার হিসেবে উবার একাউন্ট রেজিস্টার করুনড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য যথাযথ তথ্য প্রদান করে ড্রাইভার একাউন্ট ভেরিফাই করুনএরপর অনলাইন এগ্রিমেন্টসমূহ সাইন করুন ও কাংখিত যানবাহন উবার একাউন্টে যোগ করুন।সবশেষে আপনার শহরের নিয়ম অনুযায়ী উবার এর লোকাল এক্টিভেশন সেন্টারে গিয়ে উবার একাউন্ট একটিভেশন এর প্রক্রিয়া শুরু করুনউবার একাউন্ট খোলা ও সেটাপ এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে পাঠাও এর মত একইভাবে রাইড শেয়ারিং করে আয় করতে পারবেনপাঠাও ও উবার এর মতো প্রায় একই নিয়মে ওভাই, মুভ, স্যাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে থাকে। উক্ত কোম্পানিসমূহের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে ড্রাইভার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। ড্রাইভার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন এর শর্ত হলো এনআইডি কার্ড/পাসপোর্ট, গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইত্যাদি যথাযথ থাকা।আপনি কি রাইড শেয়ারিং থেকে আয় করেন? নাকি একজন ব্যবহারকারী? নাকি দুটোই! বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।
0 মন্তব্যসমূহ