আজকের যুগে ওয়েব ডিজাইনারদের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আজকাল তাদের কার্যক্রম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালনার দিকে ঝুঁকছে। আর এর ফলে নিত্য নতুন ওয়েবসাইট তৈরির দরকার পড়ছে। আর একটি ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে তার সৌন্দর্য ও আকর্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে থাকেন ওয়েব ডিজাইনার। ওয়েব ডিজাইনের কাজ মোটেই সহজ কিছু নয়, তবে ধীরে ধীরে এটি শেখা সহজ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন টুল ও সহজ গাইডলাইনের কারণে। এখন ইন্টারনেটে বিনামূল্যেই ওয়েব ডিজাইন শেখা সম্ভব। আজকের পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন ওয়েব ডিজাইন মূলত কী এবং এটি শিখতে আপনার কী কী দরকার হবে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইটের নামও পেয়ে যাবেন ওয়েব ডিজাইন শিখবার জন্য। তবে ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরু করবার আগেই কীভাবে শিখবেন বা কী শিখবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা জেনে নেয়া জরুরি। এই পোস্ট থেকে সেই দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা থাকবে সকলের জন্য।
ওয়েব ডিজাইন কী?
নতুনরা ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে অনেক সময়ই ভুল ধারণা রাখেন। ওয়েব ডিজাইন করতে হলে আপনাকে যে প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কেও খুব দক্ষ হতে হবে এমনটি নয়। এই ভুল ধারনার কারণেই অনেক সৃজনশীল নকশাবিদ ওয়েব ডিজাইনে আগ্রহ দেখান না। তবে বিষয়টি ভিন্ন। আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন একটি ওয়েবসাইটে গেলে সেই ওয়েবসাইটকে যেভাবে দেখতে পান সেটিই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইনারদের কাজ। অর্থাৎ ওয়েব ডিজাইনার একটি ওয়েবসাইটের দৃশ্যমান আকর্ষণ বাড়াতে কাজ করেন। ওয়েবসাইট দেখতে যত সুন্দর হবে একজন গ্রাহক সেই ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু নিয়ে তত আগ্রহী হয়ে ওঠেন।ব্যাপারটি অনেকটা দোকান নকশা করবার মতোই। আপনি একটি ভালো দোকানে বা রেস্টুরেন্টে গেলে অনেক সময় তার ডেকোরেশন বা ডিজাইনের দিকে বেশি নজর দেন। সুন্দর ডেকোরেশনের রেস্টুরেন্টের আকর্ষণ ক্রেতাদের কাছে বেশি হয়, তেমনি সুন্দরভাবে নিজের পণ্য সাজিয়ে রাখলে তার বিক্রিও বেড়ে যায়। ওয়েবসাইটের ব্যাপারটিও এমন। একটি ওয়েবসাইট যে সেবা বা যে পণ্য বিক্রি করতে চাইছে তা কতটা আকর্ষণীয়ভাবে ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে পারছে সেটির উপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজই করে থাকেন ওয়েব ডিজাইনার।কোনরকম টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলেও ভালো ওয়েবসাইট ডিজাইন করা সম্ভব। তবে কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা জানা থাকলে ওয়েব ডিজাইনারের জন্য সবকিছু অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে সৃজনশীলতা ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের মিশেল। দুটি একসাথে মিলিয়েই ওয়েব ডিজাইনার কাজ করে থাকেন। তবে কোডিং জ্ঞান ছাড়াও আজকাল মকপ্লাস, ফিগমা বা স্কেচের মতো প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ওয়েবসাইট ডিজাইন করা যায়। তবে ভালো একজন ওয়েব ডিজাইনারের এইচটিএমএল, সিএসএস বা জাভাস্ক্রিপ্টের মতো প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষ হওয়া উচিত। ওয়েব ডিজাইনের মূল জায়গা হচ্ছে দৃশ্য ও একজন মানুষ কীভাবে ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করছে সেটি নিয়ে কাজ করা।
ওয়েব ডিজাইনারদের কী কী দক্ষতা থাকা উচিত?
ওয়েব ডিজাইনারকে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে। সৃজনশীল না হলে অন্য যে কোন নকশার মতোই ওয়েব ডিজাইন করা সম্ভব নয়। এটি শুধু টেকনিক্যাল জ্ঞান দিয়ে সম্ভব নয়, টেকনিক্যাল জ্ঞান এখানে শুধুই সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। কাজেই একজন ওয়েব ডিজাইনারের দক্ষতার জায়গা অন্য ওয়েব ডেভেলপারদের থেকে ভিন্ন হয়। এখানে একজন ওয়েব ডিজাইনারের মূলত কী কী দক্ষতা থাকা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করা হল।
ভিজ্যুয়াল ডিজাইনে পরিপূর্ণ দক্ষতা
বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপের দৃশ্যমান বিভিন্ন এলিমেন্ট ও এফেক্ট দেখে তার উন্নতি করা একজন ভিজ্যুয়াল ডিজাইনারের কাজ। এর মধ্যে আছে ওয়েবসাইটের রঙ, চিত্র, ছবি, টাইপোগ্রাফি, লেআউট, হোয়াইট স্পেস ইত্যাদি সবকিছুই যা ওয়েবসাইটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ভিজ্যুয়াল ডিজাইনের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের এই সকল ব্যাপারে ধারনার পাশাপাশি দরকার হয় সৃজনশীলতার। কোন ব্যাপারটি সুন্দর লাগবে বা সকলের কাছে আকর্ষণীয় মনে হবে সেটি ভিজ্যুয়াল ডিজাইনার ঠিক করেন। কাজেই এই ব্যাপারে পরিপূর্ণ দক্ষতা থাকা দরকার একজন ওয়েব ডিজাইনারের।
লেআউট ডিজাইন
আপনি বিভিন্ন এলিমেন্ট একটি ওয়েবসাইটের পেজে কীভাবে সাজাবেন সেটিই হচ্ছে মূলত লেআউট ডিজাইন। এই এলিমেন্টের মধ্যে আছে বিভিন্ন টেক্সট, ছবি, শেপ ইত্যাদি। একটি ওয়েবসাইটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে লেআউট ডিজাইন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। পুরো ওয়েবসাইটের চেহারা পাল্টে দিতে পারে সুন্দর লেআউট ডিজাইন। ওয়েবসাইট থেকে সেরা পারফর্মেন্স পেতে সঠিকভাবে সকল এলিমেন্টগুলোকে সাজানোর বিকল্প নেই। কাজেই এই সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হয় ওয়েব ডিজাইনারকে।
কালার স্কিম
রঙ বা কালার নিয়ে পরিপূর্ণ ধারণা থাকা দরকার একজন ওয়েব ডিজাইনারের। কালারের সঠিক ব্যবহার একটি ওয়েবসাইটকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বা সেবা অনুযায়ী কালার নির্ধারণ করা উচিত যা সেই প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা বা সেবাকে তুলে ধরতে পারে। ওয়েবসাইটের টার্গেট ভিজিটররা কেমন কালার পছন্দ করেন সে নিয়েও জ্ঞান রাখা উচিত। এসব দিকে খেয়াল রেখেই পুরো ওয়েবসাইটের ডিজাইন করা উচিত।
টাইপোগ্রাফি
ফন্ট ডিজাইন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ওয়েবসাইট ডিজাইনের ক্ষেত্রে। কাজেই পুরো ওয়েবসাইটে সকল লেখা যাতে সহজেই পড়া যায় এমনভাবে ফন্ট সেট করা উচিত। সেই সাথে ফন্ট দেখতেও সুন্দর হওয়া উচিত। তাই ফন্ট এবং তার ব্যবহারেও দক্ষতা অর্জন করতে হয় একজন ওয়েব ডিজাইনারকে।
ন্যাভিগেশন ডিজাইন
ন্যাভিগেশন বা ওয়েবসাইটের মধ্যে একজন ব্যবহারকারী কীভাবে সকল কিছু সহজেই পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হয় ওয়েব ডিজাইনারকে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সকল কিছু যেন খুব সহজেই ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হয়। ওয়েবসাইটে ভিজিটের সময় যেন প্রতিটি পেজ থেকেই সহজে পুরো ওয়েবসাইটে স্বল্প সময়ে ঘোরা সম্ভব হয় সেভাবেই তা নকশা করতে হয়। কাজেই এই ব্যাপারে পরিপূর্ণ ধারণা অর্জন করতে হয় একজন ওয়েব ডিজাইনারের।
কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু
ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু সঠিকভাবে রাখতে হয় একজন ওয়েব ডিজাইনারকে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারী যেন তার দরকারি কাজ কোনরকম সমস্যা ছাড়াই করে ফেলতে পারে সেই ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা জরুরি। কোন কাজ একটি ওয়েবসাইটে কতো সহজে করা যায় তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ফলে এই ব্যাপারেও দক্ষতা অর্জন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
0 মন্তব্যসমূহ