অনলাইনে কাজ করা বা ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটা শুনতে বেশ মজাদার শোনায়। কিছু না জেনে বা না করে কিন্তু এমনিতেই ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারা যায়না। অনলাইনে কাজ করতে হলে সকল ফ্রিল্যান্সার এর উচিত কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা রপ্ত করে রাখা। সকল ফ্রিল্যান্সার এর মধ্যে এই পোস্টে উল্লেখিত গুনগুলো থাকা অত্যাবশ্যক।নিজের মূল কাজের পাশাপাশি আরো অনেক দক্ষতা থাকা প্রয়োজন যেকোনো ফ্রিল্যান্সারের। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে কাজ করতে হলে যেসব দক্ষতা দরকার সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত।
স্ব-শিক্ষা
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে অবশ্যই নিজ থেকে শেখার স্পৃহা আর ইচ্ছা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন চাকুরীজীবীকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কোর্স করানো হয় ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা হয়, কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সারকে নিজের মোটিভেশন ব্যবহার করে নতুন জিনিস শিখে নিজের দক্ষতা বাড়াতে হয়। ইতিমধ্যে থাকা কোনো দক্ষতাকে বাড়ানো হোক কিংবা নিজের কাজকে আরো ভালো করতে নতুন দক্ষতা শেখানো, উভয় ক্ষেত্রেই নতুন কিছু শিখতে নিজেকে মোটিভেট করতে হয়। বই পড়ে, ভিডিও দেখে, কোর্স থেকে, ইত্যাদি উপায়ে একজন ফ্রিল্যান্সার নিজ থেকে কোনো বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করতে পারেন।
আরো পড়ুন: এই ৫৫ টি মার্কেট প্লেসে কাজ করলে বাংলাদেশ সরকার দিবে নগদ প্রণোদনা বিস্তারিত জানতে এখনই দেখুন
সময় ব্যবস্থাপনা
একজন ফ্রিল্যান্সার এর সময় ধরে কাজ করার প্রয়োজন না হলেও জীবনে ভারসাম্য রাখতে অবশ্যই প্রয়োজন সময় ব্যবস্থাপনার শেখার। হেলায়ফেলায় সময় নষ্ট করে কাজকে পিছিয়ে নেওয়ার বাজে অভ্যাস অনেক ফ্রিল্যান্সারের রয়েছে যা এড়িয়ে চলতে পারলে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটুকুই এগিয়ে থাকা যায়। তাই একজন ফ্রিল্যান্সারের উচিত সময় ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট না করে সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি যত বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ হবেন, আপনার কাজের মানের সাথে সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত তত সহজ হবে।
যৌক্তিক বিশ্লেষণ
একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার কাজের বর্ণনা ক্লায়েন্টকে জানানোর প্রয়োজন হতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ক্লায়েন্ট জানতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনাকে ঠিকঠাকভাবে এসব বিষয় বুঝিয়ে দিতে হবে। আবার আপনার পেমেন্ট বাকি থাকলে সে সম্পর্কে ঠিকভাবে ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে তা আদায় করে নিতে হবে। আপনি যদি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে ঠিকভাবে কথা বলে নিজের পাওনা আদায় করতে না পারেন বা নিজের কোনো কাজের কারণ বুঝিয়ে দিতে না পারেন তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পিছিয়ে পড়বেন। যৌক্তিক বিশ্লেষণে যদি আপনি দক্ষ হন, তাহলে আপনার ক্লায়েন্টের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাও পাবেন।
দ্রুত চিন্তা
যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও দ্রুত চিন্তা, এই দুইটি বিষয় একইসাথে কাজ করে। শুধুমাত্র ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলা নয়, নিজের কাজের প্রোডাক্টিভ ফ্লো চালু রাখতে অবশ্যই দ্রুত চিন্তা করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। আপনি যত দ্রুত চিন্তা করতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি রিসার্চ করে কোনো বিষয়ের সমাধান করতে পারবেন।এছাড়াও মনে রাখবেন কোনো কাজ দ্রুত করার জন্য আপনি অতিরিক্ত পেমেন্ট চার্জ করতে পারবেন। এতে ক্লায়েন্টের সময় বাঁচবে, আপনিও সময়ের পাশাপাশি অধিক অর্থ আয় করতে পারবেন। আপনার কাজ দ্রুত হলে গিগ বাদ দিয়ে ঘন্টা-প্রতি কাজ করতে পারবেন।
সমস্যা সমাধান
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার কাজ হলো ক্লায়েন্টের সমস্যা বুঝে তার সমাধান খুঁজে বের করা। ক্লায়েন্ট যদি সমস্যার কথা ইতিমধ্যে জানে তাহলে তো আপনার জন্য কাজ সহজ হয়ে গেলো, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলটো ব্যাপারটি হয়ে থাকে।অধিকাংশ সময়ে আপনাকে সমস্যা কি তা খুঁজে বের করার পাশাপাশি এর সমাধানও খুঁজে বের করতে হবে। আপনার জটিল সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকলে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সার থেকে এই দিক দিয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন।
সমালোচনা গ্রহণ
স্বশিক্ষা দারুণ একটি সুযোগ নতুন কিছু শেখার, তবে সমালোচনা থেকেও কিন্তু অনেক ভালো শিক্ষা পাওয়া যায় যা অধিকাংশ সময় ক্লায়েন্ট থেকে আসে। আপনি যদি যথেষ্ট গবেষণা করতে ভুলে যান বা ক্লায়েন্টের বর্ণিত নিয়মে কাজ সম্পন্ন না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ক্লায়েন্ট আপনার সমালোচনা করবে ও আপনাকেও তা গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে যা থেকে শিখবেন। তবে খেয়াল রাখবেন কোনো কারণ ছাড়া যেনো ক্লায়েন্ট আপনার সমালোচনা বা অপমান না করে, এটি কোনোমতেই সহ্য করা উচিত নয়।
অভিযোজনযোগ্যতা
এডাপ্টিবিলিটি বা অভিযোজনযোগ্যতা একজন ফ্রিল্যান্সারের আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার নিয়ামক হতে পারে। উদাহরণস্বরুপঃ কোভিড-১৯ মহামারীর সময় অধিকাংশ ফ্যাশন আউটলেট ও ট্যুর কোম্পানি ব্যবসায় পিছিয়ে গেলেও ই-কমার্স কিন্তু ঠিকই জমিয়ে ব্যবসা করেছে।এখানে মূল বিষয় হলো বর্তমান অর্থনীতিতে টাকা কোথায় আছে তা বুঝতে হবে। শুধু আপনার প্যাশন বা যা পারেন তা নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে আর্থিক দুর্দশায় পড়তে পারেন একজন ফ্রিল্যান্সার। তাই একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার উচিত ইন্ডাস্ট্রির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে উন্নত করা।
আরো পড়ুন: ফটোগ্রাফি করে টাকা উপার্জন করার সহজ উপায়
উচ্চ-ঝুঁকি সহনশীলতা
ক্যারিয়ার চয়েজ হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং অনেক ঝুঁকিপূর্ণ – এই বিষয় কারো কাছেই অজানা নয়। আপনার কাছে ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদী কন্ট্রাক্ট না থাকলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা সবসময় একটি চ্যালেঞ্জ হবে। কিছু সময় প্রচুর কাজ পেলেও আবার মাঝেমধ্যে যথেষ্ট কাজ পেতেও বেগ পেতে হতে পারে।একজন ফ্রিল্যান্সার কিন্তু কোনো ধরনের পেইড লিভ বা ভ্যাকেশন এর সুযোগ পান না। তাই অবশ্যই একজন ফ্রিল্যান্সারের উচিত তার আর্থিক, শারীরিক সকল অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এটা মাথায় রেখে যে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
আর্থিক সাক্ষরতা
একজন ফ্রিল্যান্সার হতে হলে অবশ্যই কর, বাজেট, মুদ্রাস্ফীতি, অবচয়, সুযোগ খরচ, অর্থের সময় মূল্য, ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। কোনো ব্যবসার মত একইভাবে একজন ফ্রিল্যান্সারেরও এসব আর্থিক বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। নাহলে যত বেশিই আয় হোক না কেনো, ঠিকই তা সহজে নিঃশেষ হয়ে যাবে।বেশ কিছু কঠিন শব্দ দ্বারা একজন ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইনে কাজ করার জন্য দক্ষতার বিবরণ দেওয়া হলেও বিষয়গুলো বেশ সহজ কিন্তু। উল্লেখিত সাধারণ গুনগুলো না থাকলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। তাই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে অবশ্যই উল্লেখিত বিষয়ে নিজেকে পারদর্শী করার চেষ্টা করুন।
0 মন্তব্যসমূহ