আবারও আপনাদের মাঝে ফিরে এলাম ধারাবাহিক টিউনের ষষ্ঠ পর্বে। গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে অনলাইন জগতের এক বিশাল সম্ভাবনাময় ভান্ডার। প্রতিনিয়ত মানুষ এর প্রয়োজন অনুভব করছে। দিন দিন তুমুল হারে বেড়েই চলেছে এর চাহিদা। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে আপনিও যুক্ত হতে পারেন পৃথিবীর সাথে। এটি হচ্ছে এমন একটি সেক্টর যেখানে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি চাইলেই নিজেকে একজন ভাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম এবং সাধনা করতে হবে। কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না, কথাটা অনলাইন এবং অফলাইন দুটোর জন্যই প্রযোজ্য।
প্রথমেই আসা যাক স্কেচিং এঃ
স্কেচ কে স্কেচ না বলে ড্রয়িং বললে বুঝতে হয়ত সহজ হবে। অনেকেই বলেন আমি তো ড্রয়িং করতে পারি না। আবার অনেকেই বলেন ড্রয়িং এর ব্যাপারটা অনেকটা আল্লাহ্ প্রদত্ত দান। হ্যাঁ আমিও আপনাদের সাথে একমত। সবার চিন্তা এক রকম নয়, তবে আপনি যদি চেষ্টা করেন এবং প্রচুর পরিমাণ প্র্যাকটিস করেন তাহলে আপনিও একসময় ভাল মাপের ডিজাইনার হতে পারবেন। ড্রয়িং করতে গেলে আমি আপনাদের বলব আপনি আগে কয়েকজনের ড্রয়িং ভাল করে দেখেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন। প্রতিটা ড্রয়িং ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেন এবং চিন্তা করেন কিভাবে কিভাবে এই ড্রয়িংটা করা হয়েছে। আসলে ভাল ড্রয়িং এর কিছু নীতি থাকে। যেমন যারা ড্রইং নিয়ে পড়াশোনা করেন তারা জানেন তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হয় যেগুলো তাদেরকে তাদের ড্রয়িং ফুটিয়ে এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে বিশেষ হেল্প করে। প্র্যাক্টিক্যাল ড্রয়িং শেখার একটি ভাল অনলাইন ওয়েবসাইট হচ্ছে www.drawspace.com, এই সাইট থেকে একদম নতুনরাও ড্রয়িং শিখতে পারবেন। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ ফ্রীতেই বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ডাউনলোড করতে পারবেন। এই সাইটে গিয়ে রেজিঃ করে ফেলুন এবং হোমপেজে দেখবেন বিভিন্ন বিষয়ের ড্রয়িং এর টিউটোরিয়াল দেয়া আছে। আপনি সেগুলো দেখুন এবং বাসায় ড্রয়িং প্রাকটিস করার চেষ্টা করুন। এভাবে চেষ্টা করলে আপনি অবশ্যই ড্রয়িং শিখতে পারবেন।
এবার আসা যাক লোগো ডিজাইনঃ
লোগো কি?
এক কথায় কোন কোম্পানি, দেশ বা ব্যাক্তিগত কোন কিছুর পরিচয় বহনকারী ছবি। যেমন কোন মোবাইল এর পেছনে আপেলের ছবি দেখেই আপনি বলে দিতে পারবেন এটা iPhone, ঠিক এই ভাবেই একটি লোগো একটি কোম্পানির ব্যক্তিত্ব বহন করে। আর এই জন্যই লোগো ডিজাইন এত গুরুত্বপূর্ণ। তবে লোগো ডিজাইন শিখতে হলে আপনাকে আগে অবশ্যই বিভিন্ন কোম্পানির লোগো দেখতে হবে এবং সেখান থেকে আইডিয়া নিতে হবে। লোগো সবসময় Adobe Illistrator দিয়ে ডিজাইন করতে হবে এবং সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার ডিজাইন করা লোগো যেন কোম্পানির নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
আরো পড়ুন: সকল গুগল ইনকাম সার্ভিস সম্পর্কে
লোগো ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে যা মাথায় রাখতে হবেঃ
আপনি যদি একজন ভাল মাপের লোগো ডিজাইনার হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলোর উপর জোড় দিতে হবে-
১. লোগোর সাথে কোম্পানির এবং এর আডিয়েন্স এর যোগসূত্র তৈরিঃ একটি লোগো শুধুমাত্র দেখার সৌন্দর্যর জন্য তৈরি করা হয়। এর ভেতর থাকে একটি কোম্পানির অন্তর্নিহিত মেসেজ। তাই কোন কোম্পানির লোগো তৈরি করার আগে আপনাকে আগে সেই কোম্পানি সম্পর্কে একটু জেনে নিতে হবে। আর লোগো ডিজাইন করার আগে আপনাকে ভাবতে হবে এই কোম্পানি কাদের সাথে কাজ করে এবং কি ধরনের সিম্বল বা প্রতিক ব্যবহার করলে সবচাইতে উত্তম ব্র্যান্ডিং সম্ভব? এই ক্ষেত্রে আপনাকে কালার নির্ধারণ করতে হবে খুবই সচেতনতার সাথে। তবে সিম্পল লোগো ডিজাইন করাই উত্তম। এখানে উদারহনস্বরূপ- আপনি যদি কোন গার্মেন্টস কোম্পানির লোগো ডিজাইন এর কাজ পান তাহলে লোগোতে স্টিল এর বোতাম বা সুতা উল্লেখ করতে পারেন, তবে সেটা অবশ্যই সুন্দর এবং সাবলীল হতে।
২. কোম্পানির ব্র্যান্ড এর দিকে নজর দিনঃ
লোগো ডিজাইন এর ক্ষেত্রে আগে একটি স্কেচ তৈরি করে নিলে ভাল হয়। আগেই দেখে নিন ক্লাইন্ট এর আগে কোন লোগো আছে কিনা, ক্লাইন্ট এর অন্য কোন কোম্পানি থাকলে সেগুলোর লোগো দেখুন, এতে করে আপনি ক্লাইন্ট কি ধরনের লোগো পছন্দ করেন সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। এইভাবে সবার আগে আপনি ক্লাইন্ট এবং তার আইডিয়া এবং পছন্দ জেনে নিন। এতে করে সহজেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লোগো ডিজাইন করতে পারবেন।
৩. সব কিছুরই ব্যাকআপ রাখুনঃ
লোগো ডিজাইন করতে গেলে দেখা যাবে, আপনি একবারে আপনার লোগো ডিজাইন কমপ্লিট করে ফেলতে পারবেন না। প্রথমবার সাবমিত করার পর ক্লাইন্ট আপনাকে কোন অংশ পরিবর্তন করতে বলতে পারে। পরে সেটি চেঞ্জ করার পর আবারও কোন জায়গায় চেঞ্জ করতে বলতে পারে। এই জন্য প্রতিবার সাবমিট করার সময় অবশ্যই এই সময়ের আলাদা ব্যাকআপ রেখে দিবেন। কারন এমনও হতে পারে- ৩ বার আপনাকে দিয়ে লোগোর বিভিন্ন অংশ চেঞ্জ করানোর পর ক্লাইন্ট বলতে পারে প্রথম বারের টাই ভাল ছিল। তাই আপনি যদি প্রতিবারের ওয়ার্কসাবমিট এর ব্যাকআপ না রাখেন তাহলে পরে অনেক ঝামেলায় পরবেন। আর তাই ভুলেও কখনো ব্যাকআপ রাখতে ভুলবেন না।
এবার আসি অন্যান্য ডিজাইন ওয়ার্ক এঃ
লোগো ডিজাইন হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর একটি অংশ। তবে এটি ছাড়াও আরও অনেক কাজ রয়েছে এই খাতে। বিলবোর্ড থেকে শুরু করে আপনার বইয়ের কভার পেইজের ডিজাইন এর কাজও পাওয়া যায় অনলাইনে। ইন্টেরিয়র ডিজাইন এরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি হচ্ছে একটি ঘরের ভেতরের অংশ কেমন হবে সেটা ডিজাইন করা। এই রকম বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন এর কাজ রয়েছে।
এবার চলুন জেনে নিই কিভাবে শিখতে পারেন গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য আমি বলব আপনি ইংরেজী কোন ওয়েবসাইট থেকে টিউটোরিয়াল দেখুন। এতে করে আপনি অনেক কিছু খুব বিস্তারিত জানতে পারবেন। এই রকম দুইটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে- lynda.com এবং tutsplus.com, গুগলে graphics design tutorial লিখে সার্চ করলেই অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সকল সাইটের টিউটোরিয়াল গুলো ফ্রী নয়, এই জন্য আপনি চাইলে টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট কিনে নিতে পারেন। তবে আমি বলব- যারা টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন তারা টরেন্ট এ একটু খুজে দেখুন, ভাল করে খুজলে অবশ্যই ভিডিও গুলো ফ্রীতে পেয়ে যাবেন। টরেন্ট ফাইল কিভাবে ডাউনলোড করতে হয় সেটি আপনারা বিভিন্ন বাংলা ব্লগ এ খুজলেই পেয়ে যাবেন। তবে আমি খুব শীঘ্রই চেস্টা করব আপনাদেরকে টরেন্ট ডাউনলোড করার উপর টিউন করতে। যাই হোক, যদি ইংরেজী টিউটোরিয়াল গুলো সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে নেটে অনেক সাইট রয়েছে যেগুলো আপনাকে অনেক লিখিত টিউটোরিয়াল দিবে। আপনি সেগুলো দেখে শিখতে পারেন। তবে এখন সুখবর হচ্ছে- বাংলা ভাষায় অনেকেই অনেক টিউটোরিয়াল বের করেছেন যেগুলো দেখে আপনি শিখতে পারেন। তবে বাংলা টিউটোরিয়াল গুলো দেখে প্র্যাক্টিস করলে আপনি অনেকটাই উপকৃত হবেন। যারা ইংরেজি ভাল জানেন তারা অবশ্যই অবশ্যই ইংরেজি টিউটোরিয়াল গুলো দেখবেন, কারন ইংরেজি টিউটোরিয়াল গুলোতে একদম ভেতর থেকে আলোচনা করা হয় যেগুলো অন্য কোথাও এত বিস্তারিত করে আলোচনা করা হয় না।
0 মন্তব্যসমূহ